মঙ্গলবার ৫ আগস্ট ২০২৫ - ১১:৪৪
ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর জুহুরের পূর্বে পাঁচটি অবশ্যম্ভাবী নিদর্শন

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, মানবতার মুক্তিদাতা ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর জুহুর (পুনরাগমন) একটি নির্ধারিত ও অবধারিত ঘটনা। তবে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনের অবতারণা হবে, যা মুসলিম উম্মাহ ও গোটা মানবজাতির জন্য এক মহা পরিবর্তনের পূর্বাভাস।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: প্রখ্যাত শিয়া আলেম শেখ সাদূক (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ কামালুদ্বীন ও তামামুন্নি'মা-তে, ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর নির্দেশে সংকলিত একটি হাদীসে উল্লেখ করেছেন—ইমাম জাফর সাদিক (আ.) এই নিদর্শনগুলোর কথা পূর্বাভাস হিসেবে তুলে ধরেছেন।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী, ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর জুহুর (তথা আবির্ভাবের) পূর্বে পাঁচটি ঘটনা অবশ্যম্ভাবীভাবে সংঘটিত হবে:

ইয়েমেনির আবির্ভাব
ইয়েমেন অঞ্চল থেকে এক ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক ও পথপ্রদর্শক নেতা আত্মপ্রকাশ করবেন, যিনি সরাসরি ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর পক্ষে থাকবেন। তিনি মানুষকে সত্য পথে আহ্বান জানাবেন এবং বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন। ইসলামী বর্ণনায় ইয়েমেনির পতাকাকে “সর্বাধিক সঠিক ও নির্দেশনাপূর্ণ” বলা হয়েছে।

সুফিয়ানির আবির্ভাব
সিরিয়ার দিক থেকে একটি শত্রু শক্তি, যার নেতা “সুফিয়ানি” নামে পরিচিত, ইসলামের নামে বিভ্রান্তিকর ফিতনার সূচনা করবে। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর, যুদ্ধপ্রবণ ও ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হবেন। এই বিদ্রোহ দমন করা হবে ঐশী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে।

আকাশবাণী (সওত-উস-সামা)
রজব মাসের ২৩ তারিখ রাতে আকাশ থেকে এক অলৌকিক ও স্পষ্ট আওয়াজ শোনা যাবে। এতে ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর জুহুরের ঘোষণা থাকবে এবং পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ ভাষায় তা শুনতে পাবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি হেদায়তের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হবে।

বায়দার ভূমিধস
মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী 'বায়দা' নামক মরুভূমিতে সুফিয়ানির সেনাবাহিনী অলৌকিকভাবে ভূগর্ভে ধসে যাবে। এটি এমন এক ঐশী শাস্তি হবে যা তার সামরিক শক্তিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেবে এবং ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর বিজয়ের পথ প্রশস্ত করবে।

নাফস-এ-জাকিয়্যার শাহাদাত
একজন নিষ্পাপ, ন্যায়পরায়ণ ও মহৎ চরিত্রের ব্যক্তি, যিনি ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর পক্ষ থেকে মানুষকে আহ্বান করবেন, তাঁকে মক্কার পবিত্র কাবার নিকটে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে। এই শহীদকে “নাফস-এ-জাকিয়া” বা “পবিত্র আত্মা” নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর শাহাদাত ইমাম মাহদী (আ.ফা.)-এর জুহুরের ঠিক পূর্বে সংঘটিত হবে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব
এই পাঁচ নিদর্শনকে শিয়া ইসলামি চিন্তাধারায় “আলামাতুল জুহুর” অর্থাৎ আবির্ভাবের চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়। মুসলিম বিশ্বে বিশেষত শিয়া ধর্মীয় পরিমণ্ডলে এগুলোর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। অনেক ইসলামি গবেষক এগুলোর তাৎপর্য ও সময়কাল নিয়ে চর্চা করে আসছেন।

এই নিদর্শনগুলো কেবল ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং ন্যায়, অধিকার ও ঈশ্বরকেন্দ্রিক নেতৃত্বের বিশ্বব্যাপী প্রত্যাবর্তনের এক বার্তা। এগুলোর প্রতিফলন হতে পারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে মানবতা আবারও ন্যায়ের আলোয় আলোকিত হবে।

[সূত্র: আল-কাফি, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩১০ | কমালুদ্বীন ও তামামুন্নি'মা - শেখ সাদূক (রহ.)]

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha