বৃহস্পতিবার ৭ আগস্ট ২০২৫ - ০৯:৫৮
আরবাঈন পদযাত্রা: আত্মিক অনুশীলন ও মানবিক মহাকাব্য

আরবাঈন পদযাত্রা কেবল একটি শারীরিক ভ্রমণ নয়; এটি এক গভীর মানবিক ও আত্মিক যাত্রা, যেখানে লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা, শোক, আত্মত্যাগ এবং আত্মজাগরণের অসংখ্য অনুল্লেখিত কাহিনি। এই বিশাল কর্মযজ্ঞকে এক গভীর অধ্যাত্মচর্চা এবং মানবতার মহাস্রোত হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইরানের প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও শিক্ষক হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মদ হাসান নবাভি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: জনাব নবাভি আরবাঈন পদযাত্রাকে একধরনের "আত্মিক ড্রিল" হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “জিয়ারতকারীরা আরাম-আয়েশের জীবন ত্যাগ করে রোদে-ঝড়ের মাঝে হাঁটেন, পায়ে ফোস্কা পড়লেও থেমে যান না। তারা যেন জীবন্ত প্রতিফলন হয়ে ওঠেন সেই দোয়ার: ‘ইয়া লাইতানাকুন্না মাআক’—হায়! যদি আমরা ইমাম হুসাইনের (আ.) পাশে থাকতে পারতাম!”

ব্যক্তিগত কষ্ট থেকে আত্মশুদ্ধির পথে
তার মতে, অনেক জিয়ারতকারী এই যাত্রায় যোগ দেন ব্যক্তিগত শোক, অন্তর্দহন বা অর্থপূর্ণ জীবনের খোঁজে। তিনি বলেন, “এই পথচলা কেবল বাহ্যিক নয়—এটি এক অন্তরাত্মার ভ্রমণ। পথে কেউ মুখোমুখি হয় নিজের অতীত, অনুশোচনা কিংবা ব্যর্থতার সঙ্গে। কেউ কেউ এই যাত্রায় এমন এক শান্তি খুঁজে পান, যা তারা বহু বছর ধরে হারিয়ে ফেলেছিলেন।”

প্রতিটি পদক্ষেপে অসংখ্য জীবন্ত গল্প
জনাব নবাভি বলেন, আরবাঈনের প্রতিটি কদমে লুকিয়ে আছে নিরব, গভীর ও দৃশ্যমান গল্প, যা বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে। “কেউ হয়তো হাজার হাজার কিলোমিটার হাঁটেন এবং মাঝপথেই বদলে যায় তার জীবন। সেই মোড় ঘোরা মুহূর্তটাই তো নাটকের প্রকৃত সারবস্তু। এমন প্রতিটি জিয়ারতকারী যেন এক একটি চলচ্চিত্র।”

তিনি বলেন, “একজন জিয়ারতকারীর সঙ্গে শুধু একটি ক্যামেরা থাকলেই দেখা যাবে—আহওয়াজ থেকে কারবালা পর্যন্ত কত শত অনবদ্য গল্প, কত অচেনা মানবিক মুহূর্ত।”

বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ
প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ, অনেকেই পায়ে হেঁটে, যাত্রা করেন ইরাকের কারবালা নগরীতে—ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের ৪০তম দিন, ‘আরবাঈন’ পালনের উদ্দেশ্যে।
এই পদযাত্রা শুরু হয় নজাফ, বসরা, এমনকি ইরান ও পাকিস্তান থেকেও। শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ এই যাত্রা এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ বার্ষিক সমাবেশগুলোর একটি।

মানবতা, ভ্রাতৃত্ব ও সত্যের বার্তা
তিনি বলেন, “আজকের পৃথিবী যেখানে স্বার্থপরতা, বিভাজন ও সহিংসতায় আক্রান্ত, সেখানে আরবাঈন আমাদের শেখায় ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা। যারা এই যাত্রায় অংশ নেন, তারা অজানা মানুষকে খাবার খাওয়ান, আশ্রয় দেন, সেবা করেন—এইরাই প্রকৃত গল্পের নায়ক।”

তিনি আরও বলেন, “যদি এই গল্পগুলো সংবেদনশীলতা ও বাস্তবতার সঙ্গে বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করা যায়, তবে সেগুলো হয়ে উঠতে পারে মানবজাতির সবচেয়ে গভীর ও প্রভাবশালী কাহিনি।”

আরবাঈন পদযাত্রা কেবল ইতিহাসের স্মৃতি নয়—এটি জীবন্ত চেতনার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে প্রতিটি পদচারণা যেন এক একটি প্রার্থনা, প্রতিটি জিয়ারতকারী এক একজন বার্তাবাহক।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha