বৃহস্পতিবার ৭ আগস্ট ২০২৫ - ১৪:৫৮
ইমাম হাসান (আ.)-এর ইমামত নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো ভিত্তিহীন—প্রমাণ রয়েছে শতশত হাদিসে

বর্তমানে কিছু ওহাবি চক্র বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় নেটওয়ার্কে এমন দাবি করে থাকেন যে, আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী (আ.) ইমাম হাসান (আ.)-কে ইমামত বা মুসলমানদের অভিভাবকত্বের জন্য নিয়োগ করেছিলেন—এমন কোনো প্রমাণ নাকি নেই।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, শিয়া গ্রন্থ, ঐতিহাসিক দলিল ও সুন্নি উৎসের সমন্বয়ে প্রকাশ পায় স্পষ্ট সত্য

বর্তমানে কিছু ওহাবি চক্র বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় নেটওয়ার্কে এমন দাবি করে থাকেন যে, আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী (আ.) ইমাম হাসান (আ.)-কে ইমামত বা মুসলমানদের অভিভাবকত্বের জন্য নিয়োগ করেছিলেন—এমন কোনো প্রমাণ নাকি নেই। তবে এমন দাবি কেবল অজ্ঞতা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভ্রান্তি ছড়ানোর শামিল। বাস্তবতা হলো—শুধু শিয়া উৎসেই এ সংক্রান্ত প্রায় ৩০০টি হাদিস রয়েছে, যেখানে সরাসরি ও পরিষ্কার ভাষায় ইমামদের নাম, গুণাবলি ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ধারাবাহিকতা তুলে ধরা হয়েছে।

শিয়া হাদিস ও ঐতিহাসিক দলিল

শিয়া হাদিসসমূহে স্পষ্টভাবে পাওয়া যায় যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমিরুল মোমেনিন হযরত আলী (আ.) থেকে শুরু করে হযরত মাহদি (আ.) পর্যন্ত বারো জন ইমামের নাম ও গুণাবলি বারবার উল্লেখ করেছেন। এই হাদিসগুলো কখনো এককভাবে, কখনো সমষ্টিগতভাবে, কখনো সাহাবীদের কাছে চিঠি বা তাওকি (লিখিত নির্দেশ) আকারেও পাওয়া যায়।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:

হযরত ফাতিমা (সা.)-এর লওহ (তক্তি): এখানে স্পষ্টভাবে সকল ইমামের নাম লিপিবদ্ধ আছে, যার ১০-১২টি সনদ পাওয়া যায়, এবং অন্তত ২-৩টি সনদ সহীহ হিসেবে আলেমদের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য।

ইমাম সাদিক (আ.) ও ইমাম হাসান আসকারি (আ.)-এর যুগের সাক্ষ্য: সাহাবীরা সরাসরি ইমামত ও বিশ্বাস প্রকাশ করে আসতেন, যেখানে ইমাম হাসান (আ.)-এর ইমামত স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হতো।

সুন্নি আলেমদের দলিলেও স্পষ্ট স্বীকৃতি

শুধু শিয়া উৎস নয়, বহু আহলুস সুন্নাহর প্রসিদ্ধ আলেম-এর লেখায়ও এ বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়:

ইবনে আসিম (আল-ফুতুহ, খণ্ড ৪, পৃ. ২৭৫): “আমিরুল মোমেনিন মৃত্যুশয্যায় এই দায়িত্ব ইমাম হাসানের (আ.) কাছে অর্পণ করেন।”

ইবনে কাসির (আল-বিদায়া, খণ্ড ৬, পৃ. ২৪৯): “আলী ইমামত ইমাম হাসানের কাছে অর্পণ করেছিলেন এবং এরপর ইরাকবাসীরা বায়াত করেন।”

আবুল ফারাজ ইসফাহানি (আল-কানি, খণ্ড ১২, পৃ. ৩৮০): “তিনি ওসিয়ত করেছিলেন ইমামত তার পুত্র, রাসুলের সন্তান, তার অবিকল সদৃশ ইমাম হাসানের (আ.) প্রতি।”

ইবনে আবদুর রব্বাহ (আল-ইকদুল ফারিদ, খণ্ড ৪, পৃ. ২২৯): হাইসাম ইবনে আদি এবং অন্যান্য আলেমদের সাক্ষ্য অনুযায়ী, “আলী (আ.) ইমামত হস্তান্তর করেছিলেন হাসানের (আ.) কাছে।”

উপসংহার: যুক্তির নয়, অজ্ঞানতার ফল এই সন্দেহ

এই বিস্তৃত দলিল ও শত শত হাদিস, সাহাবীদের সাক্ষ্য এবং সুন্নি ঐতিহাসিকদের বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) ছিলেন আমিরুল মোমেনিনের পরবর্তী বৈধ ইমাম ও মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক।

সুতরাং কিছু চক্রের এ দাবি যে—ইমাম হাসান (আ.)-এর ইমামতের প্রমাণ নেই—এটি একেবারেই ভিত্তিহীন এবং ইলম-বিমুখ আচরণ।

তথ্যসূত্র: শিয়া হাদিস গ্রন্থ, আহলুস সুন্নাহর ঐতিহাসিক দলিল ও প্রসিদ্ধ আলেমদের রচনাবলি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha