হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের প্রখ্যাত ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির কোরআন ও হাদিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মরিয়ম হাজী আব্দুলবাকি এই প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা প্রতিটি পিতার জন্য জানা ও অনুসরণ করা জরুরি।
মূল প্রশ্ন:
যদি কখনো কোনো বাবা তার মেয়ের আচরণে ভুল দেখেন এবং তাকে সমালোচনা করতে চান বা শাস্তি দিতে চান, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে কীভাবে মেয়ের আত্মসম্মান রক্ষা করা যায়? এমনভাবে কিভাবে তা করা যায় যাতে মেয়ের আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদায় আঘাত না লাগে?
উত্তর ও বিশ্লেষণ:
মেয়েদের মনস্তাত্ত্বিক ও আবেগগত গঠন ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল ও সূক্ষ্ম। এজন্য তাদের সঙ্গে কথা বলার ধরণ, সংশোধনের পদ্ধতি এবং ব্যবহারে ভিন্নতা থাকা জরুরি। ছেলেদের সঙ্গে যেভাবে কঠিন বা সরাসরি কথা বলা যায়, মেয়েদের ক্ষেত্রে সেই একই পদ্ধতি আঘাতের কারণ হতে পারে।
একজন শিক্ষক তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছিলেন, “যখন মেয়েদের স্কুলে আমি কোনো সাধারণ বকুনি দেই, তখন তারা কেঁদে ফেলে, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। অথচ ছেলেদের স্কুলে কাউকে রাগ করে ক্লাস থেকে বের করে দিলেও তারা পরের দিন নির্দ্বিধায় ফিরে আসে।”
এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, মেয়েরা অনেক বেশি আবেগনির্ভর, সংবেদনশীল এবং মর্যাদাপূর্ণ আচরণ প্রত্যাশা করে।
সমালোচনার ভাষা হতে হবে কোমল ও সম্মানজনক:
অনেক সময় পিতারা সন্তানের ভুল দেখে সরাসরি কঠোর ভাষায় কথা বলেন। যেমন: “তুমি খুব বেশি খারাপ রেজাল্ট করেছ। আমি আশা করিনি যে তুমি এত খারাপ রেজাল্ট করবে।”
এই ধরণের বাক্য মেয়ের আত্মবিশ্বাসে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
এর পরিবর্তে, একই বক্তব্য ভালোভাবে এইভাবে বলা যায়: “আমি জানি তুমি অনেক ভালো করতে পারো। এই ফলাফল তোমার মতো একজন মেধাবীর জন্য মানানসই নয়। আমি বিশ্বাস করি, তুমি আরও ভালো পারবে। তুমি আমার গর্ব, তুমি ভালো রেজাল করতে পারলে আমিও খুশি ও গর্বিত হবো।”
এইভাবে কথা বললে মেয়ের মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে, পিতার ভালোবাসা ও সম্মান সে অনুভব করে। আর সে নিজে থেকেই পরিবর্তনের চেষ্টা করে।
সমালোচনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সংশোধন, অপমান নয়:
সমালোচনা বা শাস্তির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ভুল শোধরানো, আত্মসম্মান ও ব্যক্তিত্বে আঘাত নয়। মেয়েদের চরিত্র গঠনে ভালোবাসা, ধৈর্য, সম্মান, ও সহানুভূতির ভাষা অত্যন্ত কার্যকরী।
পিতাদের স্মরণে রাখা উচিত :মেয়েরা শুধু কথা নয়, ‘কিভাবে’ বলা হচ্ছে, সেটিও গভীরভাবে উপলব্ধি করে।
তারা চায়, বাবা তাদের পাশে থাকুক, গাইড করুক, কিন্তু ভালোবাসা ও সম্মান বজায় রেখেই।
কড়া শাসন নয়, সহানুভূতিশীল দিকনির্দেশনা তাদের বেশি কার্যকরভাবে সংশোধন করে।
উপসংহার: বর্তমানে ‘ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার’ বলে একটি মতবাদ প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যদিও অধিকার ও মর্যাদায় তারা সমান, কিন্তু তাদের মানসিক ও আবেগগত পার্থক্য উপেক্ষা করলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
মেয়েদের শিক্ষায়, শাসনে ও সংশোধনে পিতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই ভূমিকা সহানুভূতি, নম্রতা ও সম্মান মিশ্রিত না হলে তা বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে। পিতা হিসেবে মেয়ের প্রতি ভালোবাসা, বিশ্বাস ও সম্মান প্রকাশ করলে, মেয়েও সেই ভালোবাসা উন্নত চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেয়।
আপনার কমেন্ট