সোমবার ১৮ আগস্ট ২০২৫ - ১৫:৩৮
যদি স্ত্রী ও বাবা-মায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, কাকে অগ্রাধিকার দেব?

দাম্পত্য জীবন শুরু করার অর্থ পরিবারকে উপেক্ষা করা নয়; বরং প্রয়োজন এমন একটি সুস্থ সীমারেখা, যাতে বাবা-মায়ের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং দাম্পত্য জীবনের শান্তিও নিশ্চিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পরিবার হলো আমাদের জীবনের মূলভিত্তি এবং বাবা-মা সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তবে বিবাহের পর জীবনসঙ্গী হয়ে ওঠেন ভবিষ্যৎ জীবনের প্রকৃত সঙ্গী ও অংশীদার। তাই স্বাভাবিকভাবেই কখনও কখনও স্ত্রী (বা স্বামী) ও বাবা-মায়ের মধ্যে মতভেদ বা দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে।

এখানে মূল বিষয় হলো- সম্পর্কগুলোকে বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে পরিচালনা করা, কাউকে বাদ দেওয়া নয়।

প্রথম ও প্রধান নীতি হলো বাবা-মায়ের প্রতি যথাযথ সম্মান রক্ষা করা। আমাদের আচরণ বা কথাবার্তা যেন কখনও তাঁদের মর্যাদায় আঘাত না হানে। একইসঙ্গে, দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর জন্যও সম্মানজনক ও সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকা প্রয়োজন।

এই সুস্থ সীমারেখা নিশ্চিত করবে, একদিকে বাবা-মায়ের মর্যাদা অটুট থাকবে, অন্যদিকে দাম্পত্য জীবনের শান্তিও বজায় থাকবে। কারণ পরিবারে সম্পর্ক যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয় এবং সীমা স্পষ্ট না থাকে, তবে অনিচ্ছাকৃতভাবেই টানাপোড়েন ও অসম্মান সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে ক্ষতি হবে উভয় পক্ষের—স্ত্রী/স্বামী ও বাবা-মায়ের।

ইসলাম বাবা-মায়ের সম্মান রক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, অর্থাৎ এমন কিছু করা যাবে না যাতে তাঁদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। অনিয়ন্ত্রিত পারিবারিক সম্পর্ক আসলে অসম্মান ও দ্বন্দ্বের পথ প্রশস্ত করে।

কুরআন ও হাদিস থেকে নির্দেশনা
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে বলেন:
وَقَضى رَبُّكَ أَلّا تَعبُدوا إِلّا إِيّاهُ وَبِالوالِدَينِ إِحسانًا
“তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করো না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করো।” [সূরা ইসরা: ২৩]

আবার এক জায়গায় আল্লাহ বলেন:
وَوَصَّينا الإِنسانَ بِوالِدَيهِ إِحسانًا
“আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি।” [সূরা আনকাবুত: ৮]

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর একটি হাদিসে এসেছে:
الجنة تحت أقدام الأمهات
“জান্নাত হলো মায়ের পদতলে।”
[বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৭৪, পৃ. ৮২]

অন্য এক হাদিসে তিনি বলেছেন,
من أصبح ووالداه عليه ساخطـان، أصبح له بابان مفتوحان إلى النار
“যে সকালে জাগে আর দেখে তার বাবা-মা তার প্রতি অসন্তুষ্ট, তার জন্য জাহান্নামের দুই দরজা খোলা হয়ে যায়।” [আল-কাফি, খণ্ড ২, হাদিস ৩৪৯২]

একইসঙ্গে, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সম্পর্কেও ইসলামে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ইমাম আলী (আ.) বলেছেন,
المرأة ريحانة وليست بقهرمانة
“নারী হলো সুবাসিত ফুল, সে কোনো বোঝা বহনকারী কর্মচারী নয়।” [নাহজুল বালাগা, হিকমা ২৩৮]

রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই, যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম; আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার পরিবারে সর্বোত্তম।” [আল-আমালি, পৃ. ৪৭৫]

করণীয়

- ভালোবাসা দিয়ে, তবে দৃঢ়ভাবে দাম্পত্য সম্পর্ককে সুরক্ষিত রাখতে হবে।

- দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত সমস্যা পরিবারে প্রকাশ করা উচিত নয়।

- বড় ধরনের মতভেদ হলে বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারী বা অভিজ্ঞ পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া জরুরি।

- বাবা-মায়ের মর্যাদা ও স্ত্রীর অধিকার উভয়কেই সমানভাবে রক্ষা করতে হবে।

উপসংহার: স্ত্রী/স্বামীকে অগ্রাধিকার দেওয়া মানে পরিবারকে অবহেলা করা নয়; বরং এটি একটি পরিণত সিদ্ধান্ত, যেখানে সম্মান ও শান্তি সবার জন্য নিশ্চিত হয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত প্রজ্ঞা হলো—বাবা-মায়ের সম্মান রক্ষা করা এবং দাম্পত্য সম্পর্ককে ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখা।

পরিবর্তন শুরু হয় নিজের ভেতর থেকেই।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha