হাওজা নিউজ এজেন্সি: এর আগে সোমবার গাজা সিটির নাসের সড়কের এক ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত চারজন নিহত এবং ডজনেরও বেশি মানুষ আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক মোয়াথ আল-কাহলুত জানান, আতঙ্কে মানুষ ছুটোছুটি করছিলেন। “তারা জানে না কোথায় যাবে, কিংবা কোথায় নিরাপদ। সেনারা শহরের প্রতিটি প্রান্তে হামলা চালাচ্ছে।”
এদিকে, শহরের দক্ষিণাংশের জেইতুন ও সাবরা এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে। কেবল সোমবারই অন্তত ১০ জন নিহত হন। আরও দক্ষিণে দেইর আল-বালাহতে আল-মাজরা স্কুলে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন সাধারণ নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। পরবর্তীতে আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল আনাস সাঈদ আবু মুগসিব নামের এক যুবকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
চিকিৎসা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট অন্তত ৫৯ জন নিহত হন।
একবিংশ শতকে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষ এখন বোমা হামলার পাশাপাশি তীব্র দুর্ভিক্ষের হুমকির মুখে। ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধের কারণে সোমবার আরও তিন শিশু অপুষ্টি ও ক্ষুধায় মারা গেছে। অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ক্ষুধা ও অনাহারে ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিশু।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক মাসে গাজার জন্য যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, তা মোট চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ। এর মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থার (IPC) সতর্কতাকে “সরাসরি মিথ্যা” বলে উড়িয়ে দেন।
কিন্তু ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সোমবার বলেন, “এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং একবিংশ শতকের এক মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “অবিলম্বে ব্যাপক মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এনজিও, চিকিৎসক ও ত্রাণকর্মীদের কাজের সুযোগ দিতে হবে এবং সীমান্তে আটকে থাকা সহায়তা দ্রুত গাজায় প্রবেশ করাতে হবে।”
ইসরায়েলি রাজনীতিতে অস্থিরতা
অন্যদিকে ইসরায়েলে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও প্রকট হচ্ছে। সম্প্রতি গাজায় পরিচালিত এক অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা দুই জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার করে। তাঁদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়ে অনেকেই সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একজন শোকাহত বলেন, “এটা এক ভয়াবহ দুঃখের ঘটনা। জিম্মিদের প্রতি অপমান, নিহতদের প্রতি অপমান, এমনকি সৈন্যদের প্রতিও অপমান। কেউ জানে না কেন—শুধু এক ক্ষমতালোভী নেতার সিদ্ধান্ত ছাড়া।”
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়ানেটের খবরে বলা হয়েছে, সেনাপ্রধান এয়াল জামির নিরাপত্তা মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করে বলেছেন, “আপনারা গাজায় সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার পথে এগোচ্ছেন, যার ভয়াবহ পরিণতি হবে।”
ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়
এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৩,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা সিটির প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দা ইতোমধ্যেই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এখন নতুন করে তাদের জোরপূর্বক শহর ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে, অথচ পুরো উপত্যকায় কোথাও নিরাপদ আশ্রয় নেই।
গাজা আজ কেবল বোমা হামলার শিকার নয়, বরং মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে নিপতিত। আন্তর্জাতিক মহল ইসরায়েলের অবরোধ ও আগ্রাসনকে “গণহত্যা” বলে অভিহিত করছে। তবুও কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
আপনার কমেন্ট