হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে বিশিষ্ট আরব বিশ্লেষক কাসিম কুসাইর সাম্প্রতিক বছরগুলোর ঐক্য প্রচেষ্টা ও তার ফলাফল নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।
প্রতি বছর মুসলমানরা হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ বা ১৭ তারিখে হযরত মুহাম্মদ (সা.)র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করে। তারিখের এ পার্থক্য ঘোচাতে ইরান ১২-১৭ রবিউল আউয়ালকে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ ঘোষণা করেছে। এ সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্মেলন, সেমিনার, আলোচনা সভা ও যৌথ কর্মসূচি আয়োজন হয়।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই ঐক্য প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে? “গ্রেটার ইসরায়েল” প্রকল্পের চাপের মুখে ইসলামি ঐক্য আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?
ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা
১৯শ শতকের শেষ থেকে মুসলিম বিশ্বকে নতুনভাবে গড়ে তোলার ডাক দেন জামালুদ্দিন আফগানি, শেখ মোহাম্মদ আবদুহ, শাকিব আরসালান, ইজ্জুদ্দিন আল-কাসসামের মতো আলেম ও চিন্তাবিদরা। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ও উপনিবেশিক শক্তির আধিপত্য মুসলিম ঐক্যের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে।
১৯২৫ সালে মক্কা ও ১৯৩১ সালে জেরুজালেমে ইসলামি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য, মাজহাবি বিভেদ নিরসন এবং উপনিবেশবাদবিরোধী সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয়। ফিলিস্তিন তখন থেকেই মুসলিম বিশ্বের প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে।
পরে মুসলিম ব্রাদারহুডসহ বিভিন্ন আন্দোলন ইসলামি ঐক্যের ডাক দেয়। গত শতাব্দীতে আলেম ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলো সংলাপ, বই, পত্রিকা ও গবেষণার মাধ্যমে ঐক্য প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে।
আধুনিক উদ্যোগ
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), ইরানের “ওয়ার্ল্ড ফোরাম ফর প্রোক্সিমিটি অফ ইসলামিক স্কুলস অব থট”, লেবাননের মুসলিম আলেম সমিতি, শেখ ইউসুফ আল-কারদাওয়ির বিশ্ব মুসলিম আলেম ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন আঞ্চলিক সংলাপ ও মাজহাবি সহাবস্থানকে উৎসাহিত করেছে। গত পঞ্চাশ বছরে শত শত আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বিভেদ-নিরসনমূলক হাজারো বই প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমান চিত্র
তবে সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রাজনৈতিক, ফিকহি ও মতাদর্শিক মতপার্থক্য আজও রয়ে গেছে। দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ধর্মীয় ও জাতিগত ভিন্নতা আবারও সামনে আসে।
লেবানন, ফিলিস্তিনসহ কিছু অঞ্চলের প্রতিরোধ আন্দোলন পশ্চিমা আধিপত্য ও জায়নিস্ট প্রকল্পের বিরুদ্ধে মুসলিম ঐক্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হয়। যতবার বাইরের হুমকি বেড়েছে, মুসলিম বিশ্ব ততবার বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লেই বিভাজন প্রকট হয়ে ওঠে।
আজ মাজহাবি, ধর্মীয় বা জাতিগত পার্থক্য কোনোভাবেই সংঘাত বা যুদ্ধের কারণ হওয়া উচিত নয়। মুসলিম বিশ্বের প্রয়োজন ঐক্যের অভিজ্ঞতাগুলোর সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ, অগ্রাধিকার পুনর্নির্ধারণ এবং ঐতিহাসিক বিভেদ অতিক্রমের জন্য নতুন কৌশল।
সফলতার মূল শর্ত হলো মুসলিম উম্মাহর পারস্পরিক ঐক্য, সহনশীলতা এবং বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি। বিভেদকে সংঘাতের উৎস না বানিয়ে বরং শক্তির উৎসে রূপান্তরিত করতে পারলেই মুসলিম বিশ্ব প্রকৃত ঐক্যের স্বাদ পাবে।
আপনার কমেন্ট