হাওজা নিউজ এজেন্সি’কে দেয়া হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন জনাব মুহাম্মাদ শরিফুল ইসলামের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরছি:
হাওজা নিউজ এজেন্সি: হাওজা নিউজ এজেন্সি’কে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় দেয়ার জন্য প্রথমেই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা এবং ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: আমিও হাওজা নিউজ এজেন্সি’কে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
হাওজা: মিলাদুন্নবী (সা.)-এর প্রকৃত গুরুত্ব কী?
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: মিলাদুন্নবী (সা.) কেবল একটি জন্মোৎসব নয়; বরং মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামতের আগমন দিবস।
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:
قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ
অর্থাৎ, রাসূল (সা.) মানবতার অন্ধকার দূর করতে আল্লাহর আলো হয়ে আগমন করেছেন। [মায়িদা ৫:১৫]
আরেক আয়াতে তিনি বলেছেন,
وَمَآ أَرْسَلْنَـٰكَ إِلَّا رَحْمَةًۭ لِّلْعَـٰلَمِينَ
“আমি আপনাকে সমগ্র জগতের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।” [আম্বিয়া ২১:১০৭]
তাঁর জন্ম দিবসে আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে আমরা তাঁর চরিত্র, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া ও ভ্রাতৃত্বের পথ অনুসরণ করব।
হাওজা: ইসলামের ইতিহাসে ১২ ও ১৭ রবিউল আউয়ালের তাৎপর্য কী?
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: অধিকাংশ সুন্নি আলেমদের মতে নবীজীর জন্ম ১২ রবিউল আউয়ালে। অপরদিকে, শিয়া আলেমদের মতে জন্ম তারিখ ১৭ রবিউল আউয়াল এবং এদিনই ইমাম জাফর আস-সাদিক (আ.)-এরও জন্ম। এজন্যই ইমাম খোমেইনী (রহ.) ১২–১৭ রবিউল আউয়ালকে ঘোষণা করেছিলেন ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ হিসেবে। এর মূল লক্ষ্য ছিল বিভাজনের বদলে ঐক্যকে সামনে আনা।
হাওজা: নবী করিম (সা.)-এর জীবন থেকে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা হলো মুসলমানরা সবাই এক দেহের মতো। তিনি বলেছেন,
المؤمن للمؤمن كالبنيان يشد بعضه بعضا
অর্থাৎ, মুমিনরা একে অপরের সহায়ক স্তম্ভ। তাই তাঁর শিক্ষা আমাদের আহ্বান জানায়—মতভেদের দেয়াল না তুলে বরং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে।
হাওজা: বর্তমান বিশ্বে ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ কীভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে?
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: এর মাধ্যমে—
বিভাজনের বদলে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিপরীতে মুসলমানরা এক কণ্ঠে দাঁড়াতে পারে। বিশ্ব দরবারে মুসলিম ঐক্যের সুন্দর চিত্র ফুটে ওঠে। তরুণ প্রজন্ম বিভেদ নয়, ঐক্যের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়।
হাওজা: মুসলমানদের ঐক্য নষ্ট করতে শত্রুরা কী কী ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে?
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: আজকের বাস্তবতায় দেখা যায়— সাম্প্রদায়িক বিভেদ উসকে দেওয়া। মাজহাবি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও ঘৃণা প্রচার। মুসলিম দেশগুলোতে গৃহযুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়া। যুব সমাজকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা থেকে সরিয়ে ভোগবাদে ডুবিয়ে দেওয়া।
হাওজা: মুসলমানদের প্রতি আপনার আহ্বান কী?
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: কুরআন ও রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা আঁকড়ে ধরো—ঐক্যের মূলনীতি সেখানেই।
ভ্রাতৃত্বের মানসিকতা গড়ে তোলো—মতভেদ নয়, ইসলামের মূল স্রোতে ফিরে আসো।
শিক্ষা ও গবেষণায় অগ্রসর হও—কারণ জ্ঞানী উম্মাহ-ই শক্তিশালী উম্মাহ।
শত্রুর বিভাজন নীতি চিনে রাখো—ঐক্যকে অগ্রাধিকার দাও, বিভেদকে নয়।
হাওজা: সর্বশেষে আমাদের পাঠকদের জন্য কী বার্তা দিতে চান?
হুজ্জাতুল ইসলাম শরিফুল ইসলাম: ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর প্রকৃত বার্তা হলো দয়া, ন্যায় ও ভ্রাতৃত্ব। ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, তবে কোনো শত্রুই মুসলিম উম্মাহকে দুর্বল করতে পারবে না।
আপনার কমেন্ট