হাওযা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আলীরেজা আরাফি ২৫ শেহরিওর ১৪০৪ (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫) তারিখে কুমে অবস্থিত জামেয়াতুয-যাহরা (সা.)-এর ইসলামি জাগরণ হলে আয়োজিত জামেয়াতুয-যাহরা ও নারী হাওযা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের যৌথ নতুন শিক্ষাবর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। তিনি হযরত মাসুমা (সা.)-এর কুমে আগমনের বার্ষিকী উপলক্ষে বলেন: “নবী করিম (সা.)-এর নূর সমগ্র সৃষ্টিজগতে প্রথম আলো ও হেদায়েতের প্রথম প্রদীপ। বিশ্ব তাঁর উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়েছে, শরিয়ত তাঁর মাধ্যমে মানব সভ্যতা ও নতুন দুনিয়ায় প্রবেশ করেছে, এবং কেয়ামত পর্যন্ত তাঁরই আলো জগৎকে আলোকিত করবে।”
তিনি আরও বলেন, নবী করিম (সা.)-এর প্রতিফলন নাহজুল বালাগার আয়নায় সবচেয়ে সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) নাহজুল বালাগার চল্লিশটিরও বেশি স্থানে নবী করিম (সা.) সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা এক অনন্য জ্ঞানভাণ্ডার এবং আকর্ষণীয় শিক্ষণীয় সমষ্টি।
আয়াতুল্লাহ আরাফি জোর দিয়ে বলেন, নারী হাওযাগুলোতে নবী করিম (সা.)-এর পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পাঠ্য অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশেষত নাহজুল বালাগার আলোকে এই কাজ হওয়া প্রয়োজন।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, নাহজুল বালাগায় ইমাম আলী (আ.) নবী করিম (সা.)-এর বংশীয়, পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও সভ্যতামূলক দিকগুলো গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। যেমন তিনি বলেন:
হে আকাশসমূহের ধারণকারী, হে অন্তরসমূহের সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী - তা সে শাপগ্রস্ত হোক বা সৌভাগ্যবান হোক — তোমার শ্রেষ্ঠ দরূদ ও মহৎ বরকতসমূহ বর্ষিত হোক তোমার বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মদের ওপর।
আয়াতুল্লাহ আরাফি উল্লেখ করেন, এই বক্তব্যে ইমাম আলী (আ.) নবীর দাসত্ব (উবুদিয়াত) ও রাসূলত্ব (রিসালাত) দুটোই তুলে ধরেছেন। তিনি নবীকে “নবুওতের সিলমোহর” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, সময়ের বিচারে নবী (সা.) শেষ নবী, কিন্তু মর্যাদার বিচারে সর্বপ্রথম। মানবজাতি তখনই আল্লাহর মহান গ্রন্থ কুরআন গ্রহণের উপযুক্ত হয়েছিল, এবং নবী (সা.)-এর মাধ্যমে ঐশী শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, কুরআনের তাওহীদের গভীরতা পূর্ববর্তী কোনো দর্শনে বা গ্রিস-রোমান দার্শনিক ঐতিহ্যে পাওয়া যায়নি। কেবল কুরআনের আয়নাতেই প্রকৃত তাওহীদ স্পষ্ট হয়েছে।
ইমাম আলী (আ.) নাহজুল বালাগায় নবী করিম (সা.)-কে “বন্ধ দরজার উন্মোচনকারী” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঈমান, আকিদা, সমাজব্যবস্থা, ফিকহ ও নৈতিকতার অজানা দিগন্ত উন্মুক্ত করেছেন। নবী করিম (সা.) সত্যকে সত্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন, তাঁর বার্তা ও পদ্ধতি উভয়ই হক ও কল্যাণকর ছিল।
আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন, আরব উপদ্বীপে যেখানে অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও শাসনব্যবস্থায় মানবসভ্যতার মধ্যে সবচেয়ে নিচু অবস্থান ছিল, সেখানে নবী করিম (সা.) ইসলামি সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আজকের দিনে এই মহান দায়িত্ব বিশেষভাবে নারীদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে। ইতিহাসে সবসময় নারীরা ভূমিকা রেখেছেন, তবে আধুনিক যুগে পশ্চিমা সভ্যতায় তাদের ভূমিকা অনেকাংশে ভিন্ন পথে গিয়েছে। অথচ আল্লাহর অনুগ্রহে আজ নারীরা হাওযা ইলমিয়ায় প্রবেশ করেছে। তাই তাদের দায়িত্ব হলো দৃঢ় দায়িত্ববোধ নিয়ে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। এটিই আমাদের কাজ এবং ইসলামী বিপ্লবের বার্তা।
আপনার কমেন্ট