হাওজা নিউজ এজেন্সি: গতকাল বুধবার লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহর সাবেক মহাসচিব শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ও হাশিম সাফিউদ্দীনের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক শোক মজলিসের বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
ইমাম হাসান আসকারি (আ.)–এর জন্ম ও বিশেষ সময়কাল
হযরত মাসুমা ফাতিমা (সা.)–এর হারামে শহীদ স্মরণসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)–এর জন্মতারিখ প্রসঙ্গে বলেন: ঐতিহাসিক বিবরণে ভিন্নতা থাকলেও শাইখ মুফিদ (রহ.)–এর মতে, অষ্টম রবিউল আউয়ালই এই ইমামের জন্মদিন। ইমাম শিশুকালেই সামেরায় স্থানান্তরিত হন, সেখানে দীর্ঘ সময় নির্বাসিত জীবন যাপন করেন এবং সবচেয়ে স্বল্প সময়ের জন্য ইমামত পালন করেন।
তিনি আরও বলেন, ইমাম আসকারি (আ.)–এর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ছিল তাঁর পুত্র, ইমাম মাহদি (আ.জ.)–এর জীবন রক্ষা করা। শত্রুরা সর্বশক্তি দিয়ে তাঁকে ধ্বংস করতে চাইছিল। এ থেকেই বোঝা যায়, তাঁর ইমামতের সময়কাল কতটা সংবেদনশীল ছিল।
মুজাহিদদের পাঁচ বৈশিষ্ট্য
শহীদ স্মরণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি বলেন, সূরা আলে ইমরান (আয়াত ১৪৬)-এ আল্লাহর পথে সংগ্রামী মুজাহিদদের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ আছে—
১. আল্লাহভিত্তিক চিন্তা ও কর্ম
২. ভেঙে না পড়া বা অটল থাকা
৩. দুর্বল না হওয়া
৪. শত্রুর সামনে নতি স্বীকার না করা
৫. ধৈর্য ধারণ
তিনি বলেন, এই পাঁচ বৈশিষ্ট্য শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জীবন ও শাহাদাতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। ৩৩ দিনের লেবানন যুদ্ধ এবং গাজা প্রতিরোধে তারা প্রমাণ করেছেন যে, আল্লাহর উপর ভরসা করলে কোনো হুমকিই ভীতিকর নয়।
সত্যিকার শিয়া ও শহীদ হাসান নাসরুল্লাহ
তিনি ইমাম হাসান আসকারি (আ.)–এর হাদীস উল্লেখ করে বলেন, সত্যিকারের শিয়া তারা, যারা ঈমান ও সৎকর্মে দৃঢ় থাকে, আল্লাহর পথে মৃত্যুকে ভয় পায় না এবং অন্যকে নিজের উপরে অগ্রাধিকার দেয়—যদিও নিজে কষ্টে থাকুক। শহীদ হাসান নাসরুল্লাহ এই বৈশিষ্ট্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন। বহু বছর হুমকি ও চাপের মধ্যে জীবন যাপন করেও তিনি ঈমান ও সৎকর্মে অটল ছিলেন এবং মানুষের হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা অর্জন করেছেন।
বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা
অধ্যাপক রাফিয়ি বলেন, আজ ইউরোপ, আফ্রিকা, এমনকি ক্রীড়াঙ্গন ও নাট্যমঞ্চেও ফিলিস্তিনের পতাকা উড়ছে এবং নাসরুল্লাহর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। এটি কোরআনের সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন:
«سَیَجعَلُ لَهُمُ الرَّحمٰنُ وُدًّا»
মহান দয়ালু আল্লাহ তাদের জন্য মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।
যেমন ইমাম হুসাইন (আ.)–এর রক্ত কাবালার চিন্তাধারাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছিল, তেমনি প্রতিরোধের শহীদদের রক্ত ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধের আদর্শকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দৃষ্টিতে শহীদ হাসান নাসরুল্লাহ
তিনি আরও বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা শহীদ নাসরুল্লাহর জন্য সাতটি বৈশিষ্ট্য উল্লিখিত করেছেন—
১. মহান মুজাহিদ
২. প্রতিরোধের পতাকাবাহী
৩. জ্ঞানী ও যোগ্য আলেম
৪. রাজনৈতিক ব্যবস্থাপক
৫. অনন্য নেতৃত্বশীল
৬. নিরলস সংগ্রামী
৭. এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: “তিনি একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি পথ ও একটি মক্তব (চিন্তাধারা)।”
এটি প্রমাণ করে যে, প্রতিরোধের ধারা তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে শেষ হয়নি, বরং আরও শক্তিশালী হয়ে অব্যাহত থাকবে।
শহীদ হাসান নাসরুল্লাহ: ব্যক্তি থেকে মক্তব
হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি বলেন, কিছু ব্যক্তিত্ব এমন অসীম প্রভাবের অধিকারী হন, যা সময় ও ব্যক্তিগত সীমারেখা ছাড়িয়ে যায়। যেমন ইমাম খোমেইনি (রহ.) শহীদ বেহেশতিকে “একটি জাতি” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। কোরআন যেমন হযরত ইবরাহিম (আ.)–কে “একক উম্মাহ” বলে অভিহিত করেছে, তেমনি শহীদ নাসরুল্লাহও একজন ব্যক্তিগত চরিত্রের বাইরে গিয়ে চিরস্থায়ী মক্তবে রূপান্তরিত হয়েছেন।
হোসাইনির শোকসভায় ভালোবাসা
শেষে তিনি শহীদ হাসান নাসরুল্লাহর ইমাম হুসাইন (আ.)–এর শোকসভা ও আজাদির প্রতি গভীর অনুরাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। শহীদ নাসরুল্লাহ ছিলেন আহলে বাইতের (আ.) শোকে অশ্রুসিক্ত একজন সত্যিকারের আজাদার। আজ তাঁর মাজার স্বাধীনতাকামীদের জন্য এক পবিত্র জায়গা এবং প্রতিরোধের পতাকা তাঁর সহযোদ্ধাদের হাতে উঁচু হয়ে বহমান থাকবে।
আপনার কমেন্ট