হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন আলিরেজা পানাহিয়ান, বানুয়ে কারামাত (হযরত মাসুমা সা.)-এর শাহাদাতের রাতে ইমাম খোমেনি (রহ.) হোলে অনুষ্ঠিত মাহফিলে তাঁর ইতিহাসে অনন্য ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে বলেন: হযরত মাসুমা (সা.)-এর উজ্জ্বল মাজারকে এত বেশি সম্মান দেখানো হয়েছে আলেম ও ধর্মীয় মহাপুরুষদের পক্ষ থেকে যে, তাঁর মাজার আজকের এই মহিমা অর্জন করেছে। কখনো কখনো সত্য আমাদের সামনে সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করে, কিন্তু অতিরিক্ত স্পষ্টতার কারণে আমরা তাকে কম গুরুত্ব দিই।
তিনি হযরত মাসুমা (সা.)-এর শানে বর্ণিত বহু রেওয়ায়েতের উল্লেখ করে বলেন: ইমাম জাওয়াদ (আ.) বলেছেন, “যে কেউ আমার ফুফুকে কুমে জিয়ারত করবে, জান্নাত তার জন্য হবে।” ইমাম মূসা কাজিম (আ.) এ মহান বাণী বলেছেন: “ফিদাহা আবুহা” (পিতা তাঁর কন্যার জন্য আত্মাহুতি দিবে)। একজন নিষ্পাপ ইমামের পক্ষ থেকে এ ধরণের উক্তি কন্যার মহত্ত্ব ও মর্যাদার সর্বোচ্চ নিদর্শন।
পানাহিয়ান ফেমিনিস্ট প্রবাহের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন: শিয়া সম্প্রদায় যে সম্মান রেখেছে হযরত মাসুমা (সা.), হযরত ফাতেমা যাহরা (সা.) ও হযরত যায়নাব (সা.)-এর মতো মহীয়সী নারীদের জন্য-এটি প্রমাণ করে ইসলাম কখনো নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির লিঙ্গ ভাবেনি। বরং শিয়া নারীর জন্য সর্বোচ্চ অধিকার স্বীকৃত করেছে, আর তথাকথিত নারী-অধিকার আন্দোলনের দাবিগুলো এই সত্যের সামনে শূন্য ও ভিত্তিহীন।
হাওজার অধ্যাপক কুম শহরের মর্যাদা সম্পর্কে রেওয়ায়েত উল্লেখ করে বলেন: ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, “যখন বিপদ ও ফিতনা আসবে, তখন কুমের আশেপাশে চলে যাও।” এই হাদিসের অন্যতম কারণ হলো, এই শহরে কারিমা-এ-আহলে বাইত (সা.)-এর উপস্থিতি। ইতিহাস প্রমাণ করে যে সবচেয়ে কঠিন সময়ে এই ভূমি আলেমদের আশ্রয়স্থল ও ধর্মের নিরাপদ দুর্গ হয়েছে।
তিনি বলেন: ২০ বছর আগে এক ছাত্রছাত্রী জরিপে একটি মেয়ে লিখেছিল-“যখন দেখলাম এই স্থানে একজন নারীকে এমনভাবে সম্মান করা হচ্ছে, তখন আমার ইসলাম সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়।” এটি স্পষ্ট উদাহরণ যে ধর্মীয়ভাবে নারীর প্রতি সম্মান কিভাবে মানুষের মন পরিবর্তন করতে পারে, এবং এর শিকড় শিয়া শিক্ষায় নিহিত।
পবিত্র মাজারের এই বক্তা নারীর সামাজিক মর্যাদা যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থতার সমালোচনা করে বলেন: আমরা গণমাধ্যম, সাহিত্য, সিনেমা ও শিল্পকলায় পর্দানশীল নারী ও আত্মত্যাগী মায়েদের যথাযথভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। হিজাবধারী নারীর প্রশংসার আওয়াজ অবশ্যই বেহিজাবি প্রচারের চেয়ে উচ্চতর হতে হবে। সমাজে শিক্ষিতা, কোরআন হেফাজতকারী ও যোগ্য নারীদের মর্যাদা দিতে হবে, যাতে মুমিনা নারীরা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করতে পারেন।
তিনি যোগ করেন: ইসলামি ইতিহাসে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন ইমামগণ চরম চাপ ও বন্দিত্বে ছিলেন, তখন নারীরাই পতাকা হাতে এগিয়ে এসেছেন-ইমাম আলির (আ.) যুগে হযরত ফাতেমা (সা.), কারবালায় হযরত যায়নাব (সা.), ইমাম রেজা (আ.)-এর সমর্থনে হযরত মাসুমা (সা.), এবং ইমাম হাদির (আ.) স্ত্রী। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সংকট মুহূর্তে নারীরাই অগ্রণী ভূমিকায় থেকেছেন।
পানাহিয়ান হযরত মাসুমা (সা.)-এর শাহাদাতকে তাঁর জিহাদ ও হিজরতের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন: তিনি যদি মদিনায় থেকে যেতেন, আরামেই জীবনযাপন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি হিজরত করলেন এবং ইমাম রেজা (আ.)-এর সমর্থনের পথে নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন। শত্রুরাও বুঝেছিল, তাঁর এই পদক্ষেপ একটি জিহাদ, তাই তাঁর কাফেলার ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল।
শেষে তিনি ইসলামী সমাজের দায়িত্বের প্রসঙ্গে বলেন: আমাদের দায়িত্ব হলো-মুমিনা নারীর প্রতি সম্মান সমাজের সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা। যদি কোনো মেয়ে বেহিজাব হয়, তবে আমাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত-তার শিক্ষা বা পরিবারে কোথায় তার প্রতি অসম্মান হয়েছে? আমাদের উচিত ইতিবাচক দিকগুলো শক্তিশালী করা এবং আত্মত্যাগী, হিজাবধারী নারী ও মায়েদের সম্মান করা, যাতে সমাজ আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসর হয়। এটাই সেই শিক্ষা, যা হযরত মাসুমা (সা.)-এর মাজার ও শিয়ার ইতিহাস আমাদের দেয়।
আপনার কমেন্ট