বুধবার ৮ অক্টোবর ২০২৫ - ১৬:১৪
বাবার অনুপস্থিতিতে কি মা সন্তানের মানসিক ঘাটতি পূরণ করতে পারেন?

বাবার অনুপস্থিতিতে মা যখন সন্তানের পুরো দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন — বাবার ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা কখনোই সম্ভব নয়। যদিও মা পরিবার পরিচালনা ও সন্তানের যত্নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, তবুও এই পরিস্থিতি এক ধরনের জরুরি অবস্থা, যা মানসিক, সামাজিক ও আবেগিক নানা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় মা যদি পিতৃ-পক্ষের প্রবীণ সদস্যদের, বিশেষত দাদার অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে গুরুত্ব দেন, তবে তিনি নিজের দায়িত্বের ভার কিছুটা হালকা করতে পারেন এবং সন্তানের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে পারেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের নারী ও পরিবার গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুহাম্মাদ রেজা জিবায়ি নেজাদ বলেন, “যেসব পরিবারে পিতা নেই, সেখানে মা একটি গভীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। আধুনিক সমাজে অনেক মা সন্তানকে শুধুমাত্র নিজের সম্পত্তি হিসেবে মনে করেন, এবং পিতৃ-পক্ষের দাদা–দাদিকে সন্তানের লালন-পালনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চান না।”

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই ধারণা আধুনিক সংস্কৃতির প্রভাবিত ফল। আজকের সমাজে অনেক নারী পিতৃ-পক্ষের প্রবীণদের দায়িত্বশীল ও দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা স্বীকার করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এমনকি আইনগতভাবেও অনেক সময় সিদ্ধান্তগুলো মায়ের পক্ষে যায়, ফলে দাদার শিক্ষামূলক ভূমিকা অবহেলিত হয়।

পারিবারিক ভারসাম্যে দাদার গুরুত্ব
তিনি আরও বলেন, “যদি মা দাদার মর্যাদা ও ভূমিকা যথাযথভাবে বুঝে তাঁকে সম্মান দেন, তবে সন্তান লালন-পালনে তাঁর অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা বড় সহায়ক হতে পারে। এতে সন্তানের মানসিক বিকাশ সঠিক পথে এগোয় এবং মায়ের মানসিক চাপও কমে।”

বাবার অনুপস্থিতি: একটি অনিবার্য পরিস্থিতি
তিনি বলেন, “বাবার অনুপস্থিতি মূলত এক ধরনের অস্বাভাবিক বা সংকটময় অবস্থা। এ অবস্থায় মা এমন দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন, যা সাধারণত তাঁর স্বাভাবিক ভূমিকার অংশ নয়।”

তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন — “আমি একবার এক শহিদ পরিবারের মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম: ‘আপনি কি সন্তানদের জন্য বাবার অভাব পূরণ করতে পেরেছেন?’ তিনি হাসিমুখে বললেন, ‘ভান করি বটে, কিন্তু সত্যি বলতে পারি না।’”

তিনি যোগ করেন, “এটাই বাস্তবতা — মা যতই চেষ্টা করুন না কেন, বাবার ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করা যায় না। তবে মা যদি সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করেন, ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও দূরদৃষ্টির মাধ্যমে
সন্তানকে সঠিক পথে গড়ে তুলতে পারেন।”

বিশেষজ্ঞ পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা
হুজ্জাতুল ইসলাম জিবায়ি নেজাদ বলেন,
“পিতৃহীন পরিবারের শিক্ষাগত ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষা অত্যন্ত জটিল বিষয়। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় আলোচনার সীমায় পড়ে না; বরং মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও পরিবার পরামর্শবিদ্যার
বিশেষজ্ঞ জ্ঞানেরও প্রয়োজন রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবারে দায়িত্ব ও মর্যাদার কাঠামো আমরা ব্যাখ্যা করতে পারি, কিন্তু শিশুর মানসিক ও আবেগিক বিকাশের জন্য পেশাগত সহায়তা অপরিহার্য।”

মায়ের ভালোবাসা, ত্যাগ ও স্নেহের কোনো বিকল্প নেই, তবে বাবার অনুপস্থিতি এমন এক শূন্যতা তৈরি করে, যা ভালোবাসা দিয়ে পূরণ করা যায় বটে, কিন্তু প্রতিস্থাপন করা যায় না।

সন্তানের সামগ্রিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পারিবারিক সহযোগিতা,
যেখানে মা, দাদা–দাদি এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha