শুক্রবার ১০ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:৪৩
কীভাবে পুরুষদের পিতৃত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা যায়?

আধুনিক সমাজে অনেক পিতা নিজের ভূমিকা সম্পর্কে অজ্ঞ — এর পেছনে শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত ত্রুটি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ই প্রধান কারণ বলে মনে করেন ইসলামি গবেষক হুজ্জতুল ইসলাম মোহাম্মদরেজা জিবায়ি নেজাদ। তিনি মনে করেন, পরিবারে পুরুষের দায়িত্ব পুনঃস্থাপন ও পিতৃত্বের মর্যাদা পুনরুদ্ধারই সমাজ স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মোহাম্মাদ রেজা জিবায়ি নেজাদ, নারী ও পরিবার গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান, বলেছেন যে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা যদি ছেলেদের “পুরুষ হিসেবে দায়িত্বশীল হওয়া” এবং মেয়েদের “নারী হিসেবে স্নেহ ও সংবেদনশীলতার বিকাশ” শেখাতে ব্যর্থ হয়, তবে সমাজে এমন মানুষ তৈরি হয় যারা নিজেদের পরিচয়, ভূমিকা ও দায়িত্ব না জেনেই দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করে।

তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। বরং কখনও কখনও এটি এমনভাবে পরিচালিত হয় যা পরিবারবিরোধী প্রভাব সৃষ্টি করে। ছেলেরা পুরুষ হওয়ার শিক্ষা পায় না, মেয়েরাও নারী হওয়ার মানসিকতা ও গর্ব অনুভব করতে শেখে না।”

পরিবারে ভূমিকা বিভ্রান্তি ও তার ফল
তিনি বলেন, “এই অভাবের কারণে ছেলে ও মেয়েরা যখন বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করে, তারা নিজেদের লিঙ্গভিত্তিক দায়িত্ব ও সামাজিক ভূমিকা সম্পর্কে প্রস্তুত থাকে না।
মেয়েরা জানে না কীভাবে একজন নারী ও সহধর্মিণী হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করবে, ছেলেরাও জানে না কীভাবে একজন দায়িত্ববান স্বামী ও পিতা হিসেবে পরিবারের নেতৃত্ব দিতে হয়।”

তিনি যোগ করেন, “আজ দেখা যাচ্ছে, অনেক তরুণী বিবাহের পরও বুঝতে পারেন না যে পরিবারের কিছু সিদ্ধান্তমূলক ক্ষেত্র পিতার দায়িত্বাধীন। অন্যদিকে, অনেক তরুণও জানে না যে পরিবারের নেতা হিসেবে তার কী দায়িত্ব রয়েছে। কেউ কেউ জানলেও, তা সঠিকভাবে পালনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের নেই।”

দায়িত্বজ্ঞানহীন পিতাকে তুচ্ছ না করে সহযোগিতা করতে হবে
হুজ্জাতুল ইসলাম জিবায়ি নেজাদ সমাজ ও পরিবারের দায়িত্বের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “যেমন রাষ্ট্রে কোনো নির্বাচিত নেতা দুর্বল পারফরম্যান্স দেখালে তাকে সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে সহযোগিতা করা উচিত, তেমনি পরিবারেও যদি কোনো পুরুষ নিজের দায়িত্ব পালনে দুর্বল হয়, তবে তাকে তুচ্ছ করা বা উপহাস করা উচিত নয়। বরং পরিবারের সদস্যদের উচিত তাকে সহায়তা করা, যাতে সে দায়িত্বশীলতা অর্জন করতে পারে।”

তিনি পরামর্শ দেন, “স্ত্রীর উচিত স্বামীকে মানসিকভাবে সমর্থন দেওয়া, তাকে আত্মবিশ্বাস জোগানো ও সম্মান দেওয়া। যদি কোনো পুরুষ চাকরি হারায় বা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে, তখন স্ত্রী যদি স্নেহভরে বলে, ‘আমি গর্বিত যে তুমি আমার জীবনের পুরুষ।’ তবে এই কথাই তাকে নতুন উদ্যমে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অনুপ্রাণিত করবে।”

অসহযোগিতা ও অপমান—পরিবার ভাঙনের নেপথ্যে লুকানো কারণ
তিনি সতর্ক করে বলেন, “অনেক সময় পুরুষদের বিপথে যাওয়া বা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার পেছনে মানসিক সমর্থনের অভাবও দায়ী। কিছু নারী সংকটময় সময়ে স্বামীকে সহায়তা করার পরিবর্তে উল্টো মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন।”

তিনি যোগ করেন, “এমন নারীরা বারবার স্বামীকে বলেন—‘তুমি ব্যর্থ’, ‘তুমি কিছুই পারো না’—এই ধরণের অবমাননাকর কথাগুলো পুরুষের আত্মসম্মানকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে সে ঘরবাড়ি থেকে দূরে সরে যায় এবং অনেক সময় মন্দ সঙ্গ ও বিপথগামী জীবনের দিকে ধাবিত হয়।”

দাম্পত্য সম্পর্কে বোঝাপড়া ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা জরুরি

তিনি বলেন, “পরিবার টিকিয়ে রাখতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহানুভূতি এবং ভূমিকা সচেতনতা অপরিহার্য। পুরুষ যদি পিতা ও স্বামী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে সেটি শুধু তার একার সমস্যা নয়—এটি শিক্ষা ও সামাজিক কাঠামোর ব্যর্থতাও।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “পরিবারের ভেতর নারী ও পুরুষের ভূমিকা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নয়, বরং পরিপূরক। একজনের শক্তি অন্যজনের দুর্বলতাকে পূরণ করতে পারে—এই বোঝাপড়াই পরিবারের স্থিতি ও প্রশান্তির মূল চাবিকাঠি।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha