হাওজা নিউজ এজেন্সি: বিশ্লেষকরা একে ইরান–বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায় এবং ইরান সরকারের “অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় আস্থা” নীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।
বহুমাত্রিক আস্থা ও অন্তর্ভুক্তির প্রতীক
ড. জাহানআবাদি ইরানের সুপরিচিত সুন্নি মুসলিম প্রতিনিধি ও রাজনীতিকদের একজন। তাঁর এই নিয়োগকে অনেকেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখছেন— “ইরান শুধু শিয়া সম্প্রদায় নয়, বরং দেশের সব ধর্মীয় ও জাতিগত অংশের সক্ষমতাকে সমান মর্যাদা দিচ্ছে।”
ইরানের পররাষ্ট্র নীতির বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ ইরানের আঞ্চলিক কূটনীতিতে “অন্তর্ভুক্তির নরম শক্তি” (Soft Power of Inclusion) হিসেবে কাজ করবে।
একজন জাতীয় রাজনীতিকের কূটনৈতিক যাত্রা
ড. জাহানআবাদি ইরানের পার্লামেন্টের ১০ম ও ১১তম অধিবেশনে জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি কেবল সুন্নি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নন, বরং পুরো ৯ কোটি ইরানির প্রতিনিধি ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
একটি কৌশলগত ধর্মীয় সাযুজ্য
বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ হানাফি মাজহাবের অনুসারী। ড. জাহানআবাদি নিজেও একই মাজহাবের অনুসারী। এই মিলকে তেহরান ও ঢাকার মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক বোঝাপড়ার নতুন ভিত্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের ভাষায়— “বাংলাদেশের মতো হানাফি প্রধান দেশে একজন সুন্নি রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি দুই দেশের আস্থার সেতুবন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে।”
ধর্মীয় ভুল বোঝাবুঝির মোকাবিলায় দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কিছু চরমপন্থি গোষ্ঠী ইসলামী ঐক্যের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়েছে— কখনো ইরানের শিয়াবাদকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, আবার কখনো ইরানের সুন্নিদের ‘ওহাবিবাদে প্রভাবিত’ বলে অপপ্রচার করেছে।
এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করেন, “রাষ্ট্রদূতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে— তথ্যসমৃদ্ধ সংলাপ, একাডেমিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই বিভ্রান্তি দূর করা।”
‘বিশ্ব ইজতেমা’— এক সম্ভাবনার দ্বার
ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৃহত্তম ইসলামী সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা বা “জামাতুত তাবলিগ ইজতেমা”কে বিশেষজ্ঞরা ইরান–বাংলাদেশ সংলাপের জন্য এক অমূল্য কূটনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছেন।
তাদের মতে, এই ধরনের সমাবেশে রাষ্ট্রদূতের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও ইতিবাচক অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে পারস্পরিক আস্থা এবং ঐক্যের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি
ইরানের নীতিনির্ধারক ও মুসলিম বিশ্ববিষয়ক গবেষকরা আশা প্রকাশ করেছেন যে— “ড. জাহানআবাদির দক্ষ কূটনীতি ও প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবেএবং বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যের ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।”
সূত্র: ইরানের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, Mehr News Agency, Tasnim News Agency, এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মন্তব্য।
আপনার কমেন্ট