বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:২১
কেন কিছু ধর্মপ্রাণ পরিবারের সন্তান ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়

সন্তানরা অ-ধর্মীয় পরিবারে বড় হলে তাদের ধর্ম থেকে দূরে থাকা অস্বাভাবিক নয়, কারণ তারা শৈশব থেকেই ধর্মীয় অনুশীলন ও বিশ্বাসের সঙ্গে পরিচিত হয় না। কিন্তু যখন ধর্মীয় বা বিশ্বাসপ্রধান পরিবারে বড় হওয়া সন্তান ধর্মবিমুখ হয়ে পড়ে, তখন এর মূল কারণ খুঁজে পাওয়া যায় পিতামাতার আচরণ, আবেগিক দুরত্ব ও অনুপযুক্ত ধর্মীয় উপস্থাপনায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম জারিফি, ধর্মীয় শিক্ষাবিদ ও পরিবার-তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ, বলেন— সন্তানের ধর্মবিমুখতা সাধারণত ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ সময় তারা নিজেদের বিশ্বাস, অনুশাসন ও পারিবারিক প্রথাগুলোকে পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করে। যদি এই পর্যায়ে তারা পিতামাতার কথাবার্তা ও বাস্তব আচরণের মধ্যে বিরোধ বা দ্বৈততা দেখতে পায়, তবে তাদের মনে ধর্ম সম্পর্কে সন্দেহ ও অনীহা জন্ম নেয়।

ভালোবাসা ও সততার অভাব: সম্পর্কের শিকড়ে সমস্যা
পিতামাতার সঙ্গে সন্তানের আবেগিক সম্পর্ক যদি শৈশব থেকেই দুর্বল হয়, তবে ধর্মীয় শিক্ষা কেবল আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে। সন্তান তখন ধর্মকে ভালোবাসার বদলে এক ধরনের চাপ বা বাধ্যবাধকতা হিসেবে অনুভব করে।

হুজ্জাতুল ইসলাম জারিফি বলেন, “ধর্ম কেবল উপদেশ নয়, এটি এক ধরনের জীবনধারা—যা সন্তানরা দেখে শেখে, শুনে নয়।”

ভুল স্বীকারে শিক্ষার শক্তি
তিনি আরও বলেন, “যখন সন্তানরা দেখে যে তাদের পিতামাতা ধর্মের কথা বলেন কিন্তু নিজেদের আচরণে তা প্রতিফলিত করেন না, তখন তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় পিতামাতার উচিত নিজের ভুল স্বীকার করা ও প্রয়োজনে সন্তানের কাছে ক্ষমা চাওয়া।”

অনেকেই মনে করেন, সন্তানদের কাছে ক্ষমা চাওয়া পিতামাতার মর্যাদা কমায়—কিন্তু বাস্তবে এটি তাদের ব্যক্তিত্বকে আরও সম্মানজনক করে তোলে। কারণ এতে সন্তান শেখে নিজের ভুল বুঝতে পারা, তা স্বীকার করা ও সংশোধন করার সাহস।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই ক্ষমাপ্রার্থনা যেন বারবার ও অসংযত না হয়; এতে এর ইতিবাচক প্রভাব হারিয়ে যায়।”

আচরণে আদর্শ তৈরি করাই সর্বোত্তম শিক্ষা
যদি পিতামাতারা চান সন্তানরা নামাজি, নৈতিক ও ধর্মনিষ্ঠ হোক, তবে আগে নিজেদের আচরণ ও আচার-ব্যবহার সংশোধন করতে হবে। সন্তানদের শেখানো যায় না শুধু কথা দিয়ে—তারা শেখে পিতামাতার জীবনযাপন দেখে।

সন্তান আমাদের প্রতিচ্ছবি, আমাদের কল্পনা নয়
হুজ্জাতুল ইসলাম জারিফি বলেন, “সন্তানরা সেই রকম হয় না যেমন আমরা চাই, বরং তারা হয়ে ওঠে আমাদের জীবনের প্রতিফলন।”

ইসলামী শিক্ষায়ও উল্লেখ আছে, বিবাহের সময় পরিবার ও বংশের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ভিত্তি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। কারণ একজন পিতা-মাতার চরিত্রই পরবর্তী প্রজন্মের নৈতিক রূপরেখা তৈরি করে।

ধর্মীয় শিক্ষা শুধু বই বা আনুষ্ঠানিক অনুশীলনের বিষয় নয়; এটি ভালোবাসা, আচরণ, বিনয় ও সততার মাধ্যমে হৃদয়ে স্থান পায়। তাই ধর্মীয় পরিবারগুলোর প্রথম দায়িত্ব হলো—নিজেদের জীবনকে আদর্শে রূপ দেওয়া, যাতে সন্তানরা সেই আলোয় নিজেদের পথ খুঁজে নিতে পারে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha