বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫ - ১০:০০
ইসলামে পুরুষ ও নারী: সমমান মানব, ভিন্ন দায়িত্ব

ইসলামে পুরুষ ও নারী: সমমান মানব, ভিন্ন দায়িত্ব

কোরআন ও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে নারীর মর্যাদা

পবিত্র কোরআন নারী সৃষ্টি ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইসলাম পুরুষ ও নারীকে দ্বৈত নয়, বরং সমান মানব হিসেবে বিবেচনা করে। ইসলামে নারীর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, আইনগত ও ধর্মীয় দিক গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচিত হয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: বর্তমানে ইসলাম এবং লিঙ্গ সমতার বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়। অনেকেই ধারণা করেন ইসলাম নারীর সঙ্গে বৈষম্য করে। তবে কোরআন স্পষ্টভাবে পুরুষ ও নারীর আধ্যাত্মিক সমতা নিশ্চিত করেছে। “হে মানবজাতি! নিশ্চয় আমরা তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের জাতি ও গোত্রে ভাগ করেছি যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি হচ্ছে সবচেয়ে ধার্মিক ব্যক্তি। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী।” — কোরআন ৪৯:১৩

পুরুষ ও নারীর মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এক লিঙ্গের বিশেষ ক্ষমতা থাকে, অন্য ক্ষেত্রে অন্য লিঙ্গের। এ পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ বলেন, “যে কেউ সৎকর্ম করে—পুরুষ হোক বা নারী হোক—বিশ্বাস রাখে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং এক চিলেক জাফরও তাদেরকে অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।” — কোরআন ৪:১২৪

আয়াতুল্লাহ খামেনির ব্যাখ্যা
ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি (৪ জানুয়ারি ২০২৩) বলেন, “ইসলামে মানুষকে ‘মানব’ হিসেবে বিচার করা হয়। পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোনো প্রাধান্য নেই। মানবিক ও ইসলামী মূল্যবোধের দিক থেকে তারা সমান। তবে দায়িত্ব ও সামাজিক ভূমিকা ভিন্ন। শিশুপালনে নারীর ভূমিকা প্রধান, পিতার ভূমিকা সহায়ক। দায়িত্ব নির্ধারণে লিঙ্গের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিতে হবে। কেউ তাদের প্রকৃতির বিপরীতে কাজ করা উচিত নয়।”

এতে স্পষ্ট হয়, পুরুষ ও নারী মানবিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে সমান, কিন্তু দায়িত্ব ও সামাজিক ভূমিকা তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী পৃথক।

কোরআনের নির্দেশ ও আধ্যাত্মিক সমতা
কোরআন আরও বলে, পুরুষ ও নারী সদাচার ও আধ্যাত্মিক উচ্চতায় সমানভাবে পৌঁছাতে পারে। যেসব মানুষ ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বাসী, তারা পুরস্কৃত হবেন সমভাবে। “নিশ্চয়ই, মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী, আজ্ঞাবহ পুরুষ ও আজ্ঞাবহ নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজাদার পুরুষ ও রোজাদার নারী, যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে, সেই পুরুষ ও নারী, এবং যারা আল্লাহকে স্মরণ করে, সেই পুরুষ ও নারী—তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।” — কোরআন ৩৩:৩৫

সামঞ্জস্যপূর্ণ উদাহরণ:
•কর্মক্ষেত্রে নারীর নেতৃত্ব এবং পুরুষের সহায়তা একে অপরকে সমর্থন করে।

•পরিবারে সন্তান পালন ক্ষেত্রে মাতৃত্ব প্রধান, পিতৃত্ব সহায়ক হলেও দায়িত্ব সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

•শিক্ষায় এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নে পুরুষ ও নারী উভয়েই সমান সুযোগ পায়।

ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি
যেমন অতীতের পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য ক্ষতিকর ছিল, তেমনি চরম ফেমিনিজমও উভয়ের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ কোনো প্রকার চরমপন্থাকে সমর্থন করে না। ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের জন্য লিঙ্গের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ও দায়িত্ব অনুযায়ী সমন্বয় প্রয়োজন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha