হাওজা নিউজ এজেন্সি: তেহরানে সম্প্রচারিত “সামতে খোদা (আল্লাহর পানে)” নামক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, মানুষের হৃদয় সহজে পরিবর্তিত হয় না। তাই প্রত্যেকের উচিত নিজের প্রবণতা ও আকাঙ্ক্ষাগুলোকে চিনে নেওয়া এবং সেগুলোর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ শেখা। যদি মানুষ নিজের কামনা-বাসনাকে “অর্জনের সুযোগ” বা “সুযোগের সদ্ব্যবহার” হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে, তবে এই ভুল দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে পাপ, বিভ্রান্তি ও অনুতাপের দিকে ঠেলে দেয়।
হুজ্জাতুল ইসলাম পানাহিয়ান ইমাম সাদিক (আ.)-এর বাণী «إزالة الجبال أهون من إزالة قلب» — অর্থাৎ “মানুষের হৃদয় পরিবর্তনের চেয়ে একটি পাহাড় সরানো সহজ”— উদ্ধৃত করে বলেন, মানুষের হৃদয়ের দিক পরিবর্তন করা পাহাড় সরানোর চেয়েও কঠিন কাজ।
অতএব, আমাদের জন্য প্রয়োজন নিজের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে আনার শিক্ষা গ্রহণ করা।
তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ পাপে জড়িয়ে পড়ে, কারণ তারা কিছু সম্পর্ক বা সুযোগকে “গুরুত্বপূর্ণ অর্জন” বলে ভেবে বসে, অথচ বাস্তবে তা তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
যদি মানুষ এক মুহূর্ত চিন্তা করে—“এই সুযোগটি কি সত্যিই আমার জন্য কল্যাণকর?”—তাহলে সে বহু ভুল ও গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।
এই বিশিষ্ট আলেম ও চিন্তাবিদ বলেন, “ধর্ম কেবল বিধান বা আমল পালনের নাম নয়; বরং ধর্ম মানুষের মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি, সচেতনতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি সৃষ্টি করে।”
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দেন না; বরং তিনি মানুষকে চিন্তা, বিবেচনা ও সঠিক বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা দেন, যাতে সে নিজের বুদ্ধি ও বিবেকের আলোকে সঠিক পথ বেছে নিতে পারে।
হুজ্জাতুল ইসলাম পানাহিয়ান বলেন, “ধর্মের উদ্দেশ্য মানুষকে কেবল আনুগত্যশীল বানানো নয়; বরং তাকে প্রজ্ঞাবান, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।”
এই ধারণা ভুল যে ধর্ম কেবল অন্ধ আনুগত্য চায়; বরং ধর্মের প্রকৃত লক্ষ্য এমন ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করা, যারা সময়, প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা উপলব্ধি করে নিজেরাই কল্যাণের পথ অনুধাবন করতে পারে।
শেষে তিনি মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর مَن فُتِحَ لَهُ بابٌ مِن الخَیرِ فَلْیَنتَهِزْهُ؛ فإنّهُ لا یَدرِی مَتی یُغلَقُ عَنهُ এবং ইমাম মুহাম্মদ বাকির (আ.)-এর مَن هَمَّ بشَیءٍ مِن الخَیرِ فلْیُعَجِّلْهُ، فإنَّ کُلَّ شَیءٍ فیهِ تَأخیرٌ فإنَّ للشَّیطانِ فیهِ نَظْرَةً বাণী উল্লেখ করে বলেন, “সৎকর্মের কোনো সুযোগ হারানো উচিত নয়, কারণ (সৎকাজে) বিলম্ব শয়তানকে সুযোগ দেয়। যে ব্যক্তি কল্যাণ সাধনের কোনো সুযোগ পায়, তার উচিত তৎক্ষণাৎ সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা, কারণ কেউ জানে না—সে সুযোগ আবার কবে ফিরে আসবে।”
আপনার কমেন্ট