মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর ২০২৫ - ০৯:০৭
হিজাবকে রাজনৈতিকরণ করবেন না

ইরানের হাওজায়ে ইলমিয়ার বিশিষ্ট উস্তাদ ও প্রখ্যাত ধর্মীয় বক্তা হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন নাসের রাফিয়ি হিজাব সংক্রান্ত বিষয়কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার প্রবণতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই বিষয়কে নির্বাচনী বা অন্য কোনো রাজনৈতিক চ্যানেল ও আলোচনার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জতুল ইসলাম রাফিয়ি “সামতে খোদা বা আল্লাহর পথে” প্রোগ্রামের আলোচনায় সমাজে নৈতিকতা ও কল্যাণমূলক কাজের প্রসারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমাদের উচিত মানুষের ভালো দিক প্রকাশ করা এবং খারাপ দিক আড়াল করা। এটি আল্লাহর একটি বৈশিষ্ট্য—তিনি ভালো দিক প্রকাশ করেন এবং খারাপ দিক আড়াল রাখেন।

তিনি “মারুফ” বা বহুল পরিচিত কল্যাণমূলক কাজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, যে কোনো সদাচরণ—যেমন অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, মৃতের জানাজায় অংশ নেওয়া, দুঃস্থকে সাহায্য করা বা সুবিধাবঞ্চিতের জন্য বাড়ি তৈরি করা—সবই মারুফের অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি বরকতের জন্য জাকাত রয়েছে; জ্ঞান থাকলে তার জাকাত হলো জ্ঞান বিতরণ, সুনাম থাকলে জাকাত হলো সুপারিশ বা মধ্যস্থতা, আর ক্ষমতা থাকলে জাকাত হলো উপদেশ বা নৈতিক নির্দেশনা।

কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী নৈতিক জীবনযাপন
হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.)-এর উক্তি স্মরণ করিয়ে দেন, “যদি তুমি কারও প্রতি ভালো কাজ করো, তা ভুলে যাও; আর যদি কেউ তোমার প্রতি ভালো কাজ করে, তা মনে রাখো।”

তিনি বলেন, এটি কুরআনভিত্তিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ভালো দিক প্রচার করলে অন্যদের উৎসাহ এবং নৈতিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা বৃদ্ধি পায়।

হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি মানুষের দোষ-ত্রুটি আড়াল করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদি আমরা একজন মুমিনের দোষ আড়াল করি, আল্লাহও কিয়ামতের দিন আমাদের দোষ আড়াল করবেন। আর যে ব্যক্তি মুমিনের দোষ প্রকাশ করে, সেটি যেন নিজেই সেই পাপ করেছে—এটি নিন্দনীয় কাজ।

তিনি সতর্ক করেন, অন্যের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে তাড়াহুড়া করে রায় দেওয়া বা তা প্রচার করা বিপজ্জনক। মুমিন কখনও প্ররোচনা বা ঈর্ষার পথ অনুসরণ করবে না।

ভালো দিক প্রচার ও সতর্ক উপদেশের ভারসাম্য
হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি নৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ভালো দিক প্রচার করা আমাদের দায়িত্ব, কিন্তু নৈতিক উপদেশ ও সতর্কতা দেওয়া থেকেও পিছপা হওয়া যাবে না। যদি কেউ উপদেশ মেনে চলে, সে কলঙ্ক ও অপমান থেকে রক্ষা পায়।

তিনি একটি প্রভাবশালী ভিডিওর উদাহরণ দেন, যেখানে একজন হিজাববিহীন মেয়ের সম্মানজনক আচরণ তাকে প্রভাবিত করে এবং সে শেষমেষ ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মাটির চরণ স্পর্শ করে।

তিনি বলেন, এই দৃশ্য প্রমাণ করে, যুব সমাজে প্রাকৃতিক ঈমান বা ফিতরতের অস্তিত্ব রয়েছে। বাহ্যিক প্রকাশের পার্থক্য থাকলেও যুবকের আধ্যাত্মিক মূল রূপ অক্ষুণ্ণ থাকে।

সাংস্কৃতিক হুমকি ও প্রভাব
হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি সাংস্কৃতিক হুমকির বিষয়েও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, শত্রু দুইটি মূল দিকের উপর কাজ করছে আজিদা-বিশ্বাস পরিবর্তন ও জীবনধারার পরিবর্তন। বিভিন্ন বিনোদনমূলক ও অশ্লীলতা প্রচারকারী মাধ্যম সক্রিয়; তরুণরা দ্রুত প্রভাবিত হয়। সামান্য দ্বিধা বা প্রশ্নে তারা ধর্মের পথে বিভ্রান্ত হতে পারে।

তিনি সংস্কৃতি, শিক্ষা, ক্রীড়া ও অন্যান্য শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যাতে তারা এই বিষয়ের প্রতি সংবেদনশীল হয় এবং কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকর উপস্থিতি
হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি বলেন, হিজাব এবং নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুবাল্লিগ এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপস্থিতি তরুণদের ভুল পথে যাওয়া ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে।

হিজাবের প্রয়োজনীয়তা ও নৈতিক দায়িত্ব
তিনি হিজাবের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আজ আমরা হিজাববিহীনতার সমস্যার সম্মুখীন। আল্লাহ যে মেয়েটিকে সুস্থতা, নিরাপত্তা এবং সৌন্দর্য দিয়েছেন, তার জন্য নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা হলো সেই অনুদানের ‘জাকাত’। মেয়েদের উচিত সমাজে এমনভাবে উপস্থিত হওয়া যাতে অপরিচিতরা তাদের প্রতি লোভ বা অবৈধ নজর না রাখে এবং তাদের নিরাপত্তা বিপন্ন না হয়।

হুজ্জাতুল ইসলাম রাফিয়ি পুনরায় সতর্ক করেন, হিজাব সংক্রান্ত বিষয়কে কোনোভাবেই রাজনৈতিকরণ হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়—না চ্যানেলগুলিতে, না নির্বাচনী আলোচনায়।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha