মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর ২০২৫ - ১৯:৫৭
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ৩টি জীবনদায়ী উপাদান

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আয়াতুল্লাহ আলী রেজা আরাফি সাংস্কৃতিক কাজের জন্য তিনটি মৌলিক উপাদান ব্যাখ্যা করে বলেন: “খালিস নিয়ত (আখলাস)” এমন একটি উপাদান যা কাজের মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে। আল্লাহর সঙ্গে লেনদেন এমন এক আনন্দ ও বরকত সৃষ্টি করে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। তাই প্রত্যেক পদক্ষেপে আমাদের উচিত আল্লাহর সঙ্গে লেনদেনের টেবিলে উপস্থিত থাকা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আয়াতুল্লাহ আলী রেজা আরাফি আজ কোম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আহমদি রোশন হল-এ অনুষ্ঠিত জিহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক উপ-পরিচালক ও সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলোর প্রধানদের ৯৩তম সমাবেশে বক্তব্য দেন।

তিনি সাংস্কৃতিক কাজের গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন: আল্লাহ তাআলা সূরা ইউসুফের ১০৮ নং আয়াতে বলেন—
 “قُلْ هَذِهِ سَبِیلِی أَدْعُو إِلَی اللَّهِ عَلَی بَصِیرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِی وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِکِینَ”
“বলুন, এটাই আমার পথ — আমি এবং যারা আমাকে অনুসরণ করে, আমরা দৃঢ় জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সঙ্গে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাই। আল্লাহ পবিত্র, এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।”

এই আয়াতে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে যা সাংস্কৃতিক কাজের প্রথম দিকনির্দেশনা হিসেবে রাসূলুল্লাহর (সা.) মিশন থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে।

সাংস্কৃতিক কাজের জন্য ৩টি প্রয়োজনীয় উপাদান:

১. পবিত্র জগতের দিকে মনোযোগী সাংস্কৃতিক কাজ

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক বলেন: প্রথম উপাদান হলো “أدعوا إلی الله” — আল্লাহর দিকে আহ্বান করা।
এটি নির্দেশ করে যে মানবজীবন শুধু বস্তুবাদী বাস্তবতায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর লক্ষ্য উচ্চতর ও পবিত্র জীবনব্যবস্থার দিকে।
অতএব, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রথম বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত—তা যেন পবিত্র জগতের প্রতি মনোযোগী হয়।
আল্লাহই জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, এবং তিনিই মানুষকে সংগ্রাম ও গতিশীলতার প্রেরণা দেন।

২. পথ সম্পর্কে সচেতনতা ও অন্তর্দৃষ্টি (বাসিরাত)

আয়াতুল্লাহ আরাফি বলেন: এই পথ জ্ঞান, সচেতনতা ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে অগ্রসর হয়। নবী (সা.) শুধু সত্যের দিকে আহ্বান করেননি, বরং সুন্দর ও কার্যকর পদ্ধতির দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন।
অতএব, “পথ সম্পর্কে সচেতনতা ও বসিরাত” সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের দ্বিতীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

৩. সাংস্কৃতিক শৃঙ্খল ও চিন্তাগত ব্যবস্থা (মনজুমা ফিকরি)

তিনি বলেন: তৃতীয় উপাদান হলো—এই পথে একাকী চলা সম্ভব নয়।
এর জন্য প্রয়োজন একটি দল, একটি সাংস্কৃতিক শৃঙ্খল, এবং একটি সমন্বিত চিন্তাগত ব্যবস্থা।
এই চিন্তাগত ব্যবস্থা শুধু আশুরার মতো ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর পরিধি আরও বিস্তৃত।

হাওজা ইলমিয়ার পরিচালক আরও বলেন: আমরা যতই আল্লাহ সম্পর্কে বলি, তাঁর মহিমার তুলনায় তা নগণ্য। মানুষের জ্ঞান, অনুভূতি ও আবেগ আল্লাহর অসীম করুণা ও গৌরবকে সম্পূর্ণভাবে অনুধাবন করতে অক্ষম।
এই তিনটি উপাদানই সেই স্তম্ভসমূহ, যার ওপর নবী (সা.) বলেছেন: “هذه سبیلی” — ‘এটাই আমার পথ’।

আল্লাহর সঙ্গে লেনদেনের টেবিলে উপস্থিত থাকুন

আয়াতুল্লাহ আরাফি জোর দিয়ে বলেন: খালিস নিয়ত (আখলাস) কাজের মান বাড়ায়।
আল্লাহর সঙ্গে লেনদেন এমন এক আনন্দ ও বরকত সৃষ্টি করে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
সুতরাং প্রতিটি কাজে আমাদের উচিত আল্লাহর সঙ্গে সেই লেনদেনের টেবিলে উপস্থিত থাকা।

তিনি বলেন: আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে বিশ্বের চিত্র পশ্চিমা সভ্যতার চিন্তাধারায় গঠিত।
এই সভ্যতার কিছু সুবিধা রয়েছে যা অস্বীকার করা যায় না, তবে এর ধারণা ও দর্শন অনেক দিক থেকে আমাদের চিন্তাধারা থেকে ভিন্ন।
অতএব, আমাদের উচিত পশ্চিমা সভ্যতার প্রতি ন্যায্য ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে তাকানো, যাতে আমরা নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয় ও মূল্যবোধ বজায় রাখতে পারি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha