হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কুম ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপপরিচালক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন সাইয়েদ মুফিদ হোসেইনি কুহসারি ৫ নভেম্বর ২০২৫ “বে-ওয়াক্তে আরবাঈন” শীর্ষক প্রচারণার শ্রেষ্ঠ কর্মসমূহের সম্মাননা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি আরবাঈনের অনন্য মর্যাদা ও বৈশ্বিক উপস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
“বে-ওয়াক্তে আরবাঈন” প্রচারণার শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর সম্মাননা অনুষ্ঠানের ছবি দেখুন
হুজ্জাতুল ইসলাম কুহসারি বলেন: আরবাঈন এমন এক অনন্য ঘটনা, যেখানে কোটি কোটি মানুষ বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন এই ঘটনাটি বিশাল ও বহুমাত্রিক, তেমনি এর সুযোগ, চ্যালেঞ্জ ও হুমকিও বিশাল। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো — আমরা এখনও আরবাঈনকে সেইভাবে বিশ্বে পরিচিত করতে পারিনি, যেভাবে করা উচিত ছিল।
তিনি বলেন, দেশের ভেতরেও আরবাঈন মূলত একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। যারা প্রতি বছর অংশ নেন, তারা-ই মূলত এর প্রধান অংশগ্রহণকারী। যদিও প্রতি বছর কিছু নতুন মানুষ যুক্ত হচ্ছেন, তবে প্রত্যাশিত হারে এর প্রসার ঘটছে না।
কুহসারি প্রশ্ন তোলেন: “আরবাঈনের এই বিশালতা ও আন্তর্জাতিক চরিত্র থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি?” তিনি বলেন, এ বিষয়ে গঠনমূলক পর্যালোচনা জরুরি। নানা মডেল আগে চেষ্টা করা হয়েছে— যেমন বিশ্বখ্যাত টিভি চ্যানেল, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা ভালো প্রতিবেদনও তৈরি করেছেন, কিন্তু সামগ্রিক ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আরবাঈনের প্রকৃত বৈশ্বিক প্রতিফলন এখনও ঘটেনি।
তিনি আরও বলেন: নিঃসন্দেহে এর এক দিক হলো বৈরী ও বিরুদ্ধচিন্তক শক্তিগুলোর সচেতন মিডিয়া বর্জন। আন্তর্জাতিক মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলো পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে যাতে আরবাঈনকে একটি বৈশ্বিক ঘটনা হিসেবে দেখানো না হয়। এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, কারণ বিশ্বমিডিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠী এ বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করছে।
বর্তমান প্রচারপদ্ধতি আর কার্যকর নয়
কুহসারি বলেন: বর্তমানে আরবাঈন প্রচারের যেসব পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে, তা আর ফলপ্রসূ নয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আরবাঈনের বৈশ্বিক প্রতিধ্বনি কখনোই অর্জিত হবে না। তাই এখন সময় এসেছে নতুন পরিকল্পনা ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার।
গাজার অভিজ্ঞতা হতে শেখার আহ্বান
তিনি বলেন: গাজা ইস্যুর বিশ্বায়ন থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। যদিও বিশ্বমিডিয়া প্রথমে গাজাকে উপেক্ষা করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি একটি বৈশ্বিক মানবিক ও ন্যায়বিচারের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, গাজার পক্ষে অনেক আন্দোলনকারীই ছিলেন অমুসলিম ও এমনকি অধার্মিক মানুষ, যারা নিরপরাধদের পক্ষে দাঁড়িয়ে নিজেদের অবস্থান পর্যন্ত হারিয়েছেন।
আরবাঈনকে বৈশ্বিক ন্যায়বিচার ও মানবতার প্রতীকে পরিণত করা যায়
শেষে কুহসারি বলেন: মানবিক ও ধর্মীয় আন্দোলনগুলোর সফল বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরবাঈনের জন্যও নতুন পথ তৈরি করতে পারি। সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক গণমাধ্যম কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে আরবাঈনকে ন্যায়বিচার, মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার এক বৈশ্বিক আলোচনায় পরিণত করা সম্ভব।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন কুহসারি শেষে “বে-ওয়াক্তে আরবাঈন” প্রচারণার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আপনার কমেন্ট