হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসলামী নেতার প্রতিনিধি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন গাফুরি আজ সকালে ওই শহরের আয়াতুল্লাহ আল উজমা বুরুজেরদি (রহ.) হাওজা ইলমিয়া মাদরাসায় ফিকহ ও উসুলের উচ্চশ্রেণির ছাত্রদের সমাবেশে হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর উচ্চ মর্যাদা ব্যাখ্যা করেন।
বক্তৃতার শুরুতে তিনি হযরতের শাহাদাতবার্ষিকীতে শোক প্রকাশ করেন এবং বলেন, আমাদের উচিত এই মহান নারীর মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা-তাঁর অবস্থান আল্লাহর কাছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট ও আহলে বাইতের (আ.) মধ্যে অতুলনীয়।
ইসলামী নেতার প্রতিনিধি ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর একটি বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, ইমাম খোমেনি (রহ.) বলতেন, ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর সব গুণাবলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই যে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর জিবরাঈল (আ.) নিয়মিত তাঁর কাছে অবতীর্ণ হতেন, ওহি ও নির্দেশনা দিতেন, আর আমিরুল মুমিনিন আলী (আ.) সেগুলো লিখে রাখতেন।
তিনি যোগ করেন, এই বিশেষ গুণ প্রমাণ করে যে, ফাতিমা (সা.)-এর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ-এমনকি অন্য নিষ্পাপ ইমামদের মধ্যেও-কারণ নবীজীর (সা.) ওফাতের পরও ফেরেশতা ওহি নিয়ে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হতেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম গাফুরি বলেন, এই ওহিগুলোর সংকলনই ‘মুসহাফে ফাতিমা’, যা আহলে বাইত (আ.)-এর ইমামগণ বর্ণনা করেছেন ‘প্রথম ও শেষের জ্ঞানসমূহের ভাণ্ডার’ হিসেবে। এই গ্রন্থ কেবল তাঁদের কাছেই সংরক্ষিত এবং আহলে বাইতের অমূল্য উত্তরাধিকারের একটি অংশ।
তিনি আরও বলেন, মনে হয় এই গ্রন্থ মানবজাতির হেদায়েতের দায়িত্ব কিয়ামত পর্যন্ত বহন করে চলেছে। এতে এমন সব দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা নিষ্পাপ ইমামদের (আ.) বিভিন্ন যুগে মানবসমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা ও নির্দেশনা প্রদান করে।
এই আলেম বলেন, যদিও হযরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবনকাল ছিল প্রায় ১৮ বছর, তবুও তিনি মানবতার জন্য এমন সব নিদর্শন রেখে গেছেন, যা সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তুলনাহীন এবং চিরকাল তেমনই থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামের ভিত্তি গঠন ও ইমামতের ধারাবাহিকতা রক্ষায় হযরত ফাতিমা (সা.)-এর ভূমিকা অতুলনীয়। যদি তিনি না থাকতেন, তবে আমিরুল মুমিনিন (আ.)-এর জন্য সমকক্ষ কেউ থাকত না, এবং তাঁদের এই পবিত্র দাম্পত্য থেকেই এমন সন্তান জন্ম নিয়েছে, যারা ইমামতের ধারাকে অব্যাহত রেখেছে। মানবতার হেদায়েত আজও ফাতিমা যাহরা (সা.)-এর অস্তিত্বের বরকতেই টিকে আছে।
কেরমানশাহের এই প্রতিনিধি বলেন, ইমামগণ (আ.) কঠিন সময়ে ফাতিমা (সা.)-এর প্রতি আশ্রয় নিতেন। এটি প্রমাণ করে যে, মানবতার হেদায়েতের ওপর তাঁর এক গভীর আধ্যাত্মিক প্রভাব ও তত্ত্বাবধান রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, দারিদ্র্য ও কষ্টের মধ্যেও ফাতিমা (সা.) দীর্ঘ ইবাদত ও বিপুল দান-খয়রাত করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) অভাবগ্রস্তদের তাঁর ঘরে পাঠাতেন, এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁর বরকতে সকলের প্রয়োজন পূরণ করতেন।
শেষে হুজ্জাতুল ইসলাম গাফুরি বলেন, আমরা আশা করি, হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) ও হযরত মাসুমা (সা.)-এর শাফাআত আমাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
তিনি যোগ করেন, আজকের এই বক্তৃতা আমি পেশ করেছি কেবল তাঁর শাহাদাতের দিনে কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবে এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে।
আপনার কমেন্ট