শনিবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৬:৪৫
আহলে সুন্নাহর উৎসগ্রন্থে রসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অবমাননাকর বর্ণনা

আশ্চর্যের বিষয় হলো-অহলে সুন্নাহর বহু নির্ভরযোগ্য বলে পরিচিত উৎসগ্রন্থেই রসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদার বিপরীত বহু বক্তব্য পাওয়া যায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, আশ্চর্যের বিষয় হলো-অহলে সুন্নাহর বহু নির্ভরযোগ্য বলে পরিচিত উৎসগ্রন্থেই রসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদার বিপরীত বহু বক্তব্য পাওয়া যায়। এমনকি সহীহ বুখারী-যাকে তাঁরা সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ মনে করেন-সেখানেও এমন সব বর্ণনা রয়েছে, যা একজন সাধারণ মুসলমানও মেনে নিতে পারেন না।

১. উলঙ্গ অবস্থায় দরজা খোলার বর্ণনা

বর্ণনা আসে যে, রসূলুল্লাহ (সা.) নাকি সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় এক অপরিচিত ব্যক্তির জন্য দরজা খুলেছিলেন!
প্রশ্ন হলো-আমরা কি সত্যিই এমন কথা বিশ্বাস করতে পারি?

২. দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা

আরো বর্ণনা আছে-নবী (সা.) নাকি দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতেন।
আপনারা নিজের এলাকার কোনো ইমামকে যদি এমন অবস্থায় দেখেন, তবে কি তার পেছনে নামাজ পড়বেন?
যদি না পড়েন, তবে কীভাবে নবী (সা.) সম্পর্কে এমন দাবি গ্রহণ করা হয়?

৩. নাচ-গানের অনুষ্ঠানে আয়েশা-কে কাঁধে তুলে নেওয়া

একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে-নবী (সা.) নাকি আয়েশা-কে কাঁধে উঠিয়ে পাশের বাড়ির নাচ-গানের অনুষ্ঠান দেখিয়েছিলেন।
এখন বলুন-আপনার কোনো আলেম বা ইমাম যদি এমন আচরণ করেন, আপনি তার কথাকে কতটা গ্রহণ করবেন?

৪. আত্মহত্যার চেষ্টা—نعوذ بالله

সবচেয়ে বিস্ময়কর ও কষ্টদায়ক দাবি হলো-সহীহ বুখারীতে নাকি পাওয়া যায় যে, রসূলুল্লাহ (সা.) দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন (نعوذ بالله)।
ওহি কিছু সময় বন্ধ থাকার কারণে নাকি তিনি পাহাড়ের চূড়া থেকে ঝাঁপ দিতে চেয়েছিলেন-যতক্ষণ না জিবরাইল (আ.) এসে তাঁকে সান্ত্বনা দিতেন!

এ কি একটি নবীর ছবি-যিনি সামান্য বিলম্বে ওহি আসলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন?
نعوذ بالله
এমন ধারণা কি কোনো ঈমানদারের হৃদয় গ্রহণ করতে পারে?

৫. নবী ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য

আরও বর্ণনা রয়েছে-নবী ইব্রাহীম (আ.) নাকি নিজেকে রক্ষা করতে স্ত্রীকে এক অত্যাচারীর হাতে দিয়ে দিয়েছিলেন-নাউযুবিল্লাহ!
এটি কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

সহীহ বুখারীর ৬৯/৮২ নম্বর হাদিস

এই বর্ণনায় বলা হয়েছে-ওহি দেরিতে নেমে এলে নবী (সা.) অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতেন,
এবং জিবরাইল (আ.) নাকি এসে বলতেন-ক্ষমা চান; ভবিষ্যতে বেশি ওহি পাঠানো হবে!
এ ধরনের বর্ণনা কি রসূলুল্লাহ (সা.)-এর মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?

কিন্তু আল-কোরআন কী বলছে?

কোরআন সুস্পষ্টভাবে বলছে-নবী (সা.) নিজ ইচ্ছায় কিছুই করেন না; তিনি কেবল আল্লাহর ওহি অনুসরণ করেন।
তাহলে ওহি দেরিতে এলে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি কোথায় মিলবে কোরআনের সাথে?

শিয়া উৎসের নির্ভরযোগ্যতা

যদি আপনারা আল্লামা নাজমীর (রহ.) “সেইরি দার সহীহাইন” বইটি পড়েন—
(আল্লাহ তাঁর রূহকে শান্তি দিন)
দেখবেন, তিনি কত ভারসাম্যপূর্ণ গবেষণার মাধ্যমে এই বর্ণনাগুলোর বিশ্লেষণ করেছেন।
কোনো সুন্নি আলেম বা ব্যক্তির প্রতি সামান্যতম অসম্মানও নেই।
বইটি ফারসি ও আরবি-দুই ভাষায়ই রয়েছে।

একবার পড়লে বুঝতে পারবেন-অহলে বাইত (আ.)-এর প্রকৃত মূল্য কত,
এবং শিয়া উৎস যেমন আল-কাফি, বিহারুল অনওয়ার, তাহজিব, ওসায়েলুশ শিয়া-এগুলো কত গভীর ও নির্ভরযোগ্য ঐতিহ্যের ধারক।

শেষ কথা

এই ধরনের বহু বর্ণনা-যার সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন-তাদের গ্রন্থেই রয়েছে।
যদি একজন নবীর মর্যাদার সাথেই এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ কথা বলা হয়, তবে এমন উৎসের প্রতি আস্থা রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত?

রিপোর্ট: হাসান রেজা

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha