হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হায়দরাবাদের বিখ্যাত খতিব হুজ্জতুল ইসলাম ও মুসলিমিন মাওলানা সাইয়্যেদ আকীল আল-গারভী বলেন, প্রকৃত ধর্ম মানবতা; শিয়া–সুন্নি কোনো পৃথক সম্প্রদায় নয় এবং মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রদায়গত বিভাজন সৃষ্টি করেছে শাসকরাই, ইসলাম নয়। তিনি এই মতামত ব্যক্ত করেন শিয়া–সুন্নি ইউনিটি মুভমেন্ট ইন্ডিয়ার আয়োজিত “১৫০০ ইয়ার্স প্রফেট অব মার্সি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স” (১৫০০ বছরব্যাপী জশনে রাহমাতুল্লিল আলামিন)–এ, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আশিয়ানা কনফারেন্স হল, বানজারা হিলস, হায়দরাবাদে। অনুষ্ঠানটি তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়।
নিজের বক্তব্যে মাওলানা বলেন, ইসলাম কোনোভাবেই বিভাজনকে গ্রহণ করে না এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি কেবল রাজনৈতিক ও শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান যুগে মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো পুঁজিবাদ (ক্যাপিটালিজম), যার কেন্দ্র আমেরিকা ও ইসরায়েল। মাওলানার মতে, পৃথিবীর যেকোনো ছোট সংঘর্ষ বা অশান্তির পেছনে বেশিরভাগ সময়ই থাকে পুঁজিবাদী স্বার্থ।
মাওলানা আকীল আল-গারভী উদাহরণ দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে দল ও গোষ্ঠীগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়া হয়। যেমন— যদি সুন্নি জনগণকে শিয়াদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে হয়, তবে মিথ্যা কথা ছড়ানো হয় যে শিয়া মাযহাব নাকি ইরান থেকে এসেছে; অথচ ঐতিহাসিক সত্য হলো, হজরত উমর রা. ইরান জয় করেছিলেন রাসুল (সা.)–এর ইন্তেকালের পর এবং ইরান ৮০০ বছর ধরে সুন্নি ছিল। তিনি বলেন, বুখারা, তিরমিয, নিসা, নিশাপুর, সিজিস্তান— এসব শহর ইরানে ছিল এবং ইমাম মুসলিম, ইমাম বুখারি, ইমাম তিরমিযি, ইমাম নাসাঈ ও ইমাম আবু হানিফা— সবাই ইরানেরই মানুষ ছিলেন। তাই শিয়া মাযহাবকে কেবল ইরান থেকে উদ্ভূত বলা ঐতিহাসিক অজ্ঞতা।
তিনি আরও বলেন, প্রথম শিয়া সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আরব বিশ্বেই, এবং সহাবায়ে কেরাম— হজরত সালমান, হজরত আবুজর, হজরত মিকদাদ ও হজরত আম্মার ইয়াসির— ছিলেন শিয়াতের উল্লেখযোগ্য স্তম্ভ। সুতরাং শিয়া মাযহাবকে কেবল ইরান বা নির্দিষ্ট কোনো জাতির সাথে বেঁধে দেওয়া ভুল। আজ ইরানে শিয়া সরকার রয়েছে বলে এই নয় যে মাযহাব সেখান থেকেই শুরু। মাওলানা জোর দিয়ে বলেন, আমাদের উচিত রাজনৈতিক বিরোধ থেকে দূরে থেকে জ্ঞান, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। তিনি বলেন, আমাদের উচিত রাসুল আকরাম–এর সীরাত ও তাঁর প্রতি ভালোবাসার ভিত্তিতে এক হওয়া, যাতে শিয়া–সুন্নির মধ্যে প্রকৃত ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি আরও বলেন, প্রকৃত ধর্ম মানবতা— কারণ রাসুল (সা.) কেবল মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত হয়ে এসেছেন।
এই মহিমান্বিত সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন—
মুফতি মাহমুদ জুবায়ের কাসেমি (জমিয়ত উলামায়ে তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদক), হুজ্জতুল ইসলাম ও মুসলিমিন মাওলানা সাদিক হুসাইনি, জনাব মীর জামিন আব্বাস এবং বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব— যেমন ড. উদয়েশ বাওয়া (ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক), ব্রাদার ভার্গিজ থিকানাথ এসজি (ডিরেক্টর, মন্টফোর্ট সোশ্যাল ইনস্টিটিউট, উপ্পল), মিসেস সারা ম্যাথিউ (সিঙ্কলপ উইমেন্স সাপোর্ট অ্যালায়েন্স, সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মী), জনাব নাযিমুদ্দিন ফারুকী (প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, MCCI), মুফতি উমর আবিদীন (জেনারেল সেক্রেটারি, অল ইন্ডিয়া মিলি কাউন্সিল, তেলেঙ্গানা), সাইয়্যেদ শাহ মনহাল্লাহ আলভি শাত্তারী, হুজ্জতুল ইসলাম ও মুসলিমিন মাওলানা ড. সাইয়্যেদ নিসার হুসাইন হায়দার আগা (সদস্য, তেলেঙ্গানা ওয়াকফ বোর্ড), আলিমা আম্মা আতিফা (প্রিন্সিপাল, জাহরা আরবি কলেজ, তামিলনাড়ু, ‘‘বেস্ট আলিমা তামিলনাড়ু’’ পুরস্কারপ্রাপ্ত), ড. আসমা জহরা (সভাপতি, অল ইন্ডিয়া উইমেন্স মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড), ড. এম এম রেজা (প্রখ্যাত জেমোলজিস্ট)— যাঁরা সবাই ঐক্য ও মানবতার বার্তা দেন এবং সীরাতে রাসুল (সা.)–এর ওপর আলোকপাত করেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আকবর আলী ভিরজি, জনাব সাইয়্যেদ জাফর হুসাইন (সম্পাদক, দৈনিক সদায়ে হুসেইনি) এবং মীর হাসনাইন আলী খান। স্বাগত বক্তব্য দেন জনাব নুসরাত আলী খান আউন (সাধারণ সম্পাদক, শিয়া–সুন্নি ইউনিটি মুভমেন্ট ইন্ডিয়া) এবং সকল অতিথিকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড. মুহাম্মদ তাইয়্যব আলী এবং নাতের পরিবেশনা করেন নাত-পাঠকারীগণ। সম্মেলনের আয়োজন করেন হাজী মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, সভাপতি— শিয়া–সুন্নি ইউনিটি মুভমেন্ট ইন্ডিয়া। শেষে অতিথি ও উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানানো হয়। অনুষ্ঠানটি জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
রিপোর্ট: বাকির আলী, সাফির নিউজ/ সদায়ে হুসেইনি, হায়দরাবাদ দাক্ষিণ
আপনার কমেন্ট