সোমবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৪:১৪
রাসূলে আকরাম (সা.)-এর জীবনচরিত আজও মানবতাকে শান্তি ও মর্যাদার পথ দেখায়

ভারত: ভারতে ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আব্দুল মজিদ হাকিম ইলাহী, মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)–এর জন্মের পনেরো শতাব্দী পূর্তি উপলক্ষে প্রদত্ত এক বার্তায় বলেন, এই ঐতিহাসিক উপলক্ষ রাসূলে আকরাম (সা.)-এর করুণাময় ও মানুষ-গড়া জীবনচরিত নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার এক বিরল সুযোগ। তিনি বলেন, এই সীরাতের সঠিক ব্যাখ্যা গঙ্গা–যমুনা সংস্কৃতি ও বহুধর্মীয় ভারতীয় সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আব্দুল মাজিদ হাকিম ইলাহী তাঁর বার্তায় স্পষ্ট করেন যে, রাসূলে ইসলাম (সা.)–এর শিক্ষা কেবল মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়াত, রহমত ও উজ্জ্বল নৈতিকতার উৎস।

বার্তার পূর্ণাঙ্গ পাঠ নিম্নরূপ—

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।

রাসূলে আজম ইসলাম হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)–এর জন্মের পনেরো শতাব্দী পূর্তি উপলক্ষে এই পবিত্র ও আনন্দঘন মুহূর্তে আমি ভারতের আলেমগণ, জ্ঞানী ও চিন্তাবিদগণ, বিভিন্ন ধর্ম ও মতের সম্মানিত অনুসারী এবং এই সম্মেলনের শ্রদ্ধেয় আয়োজকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

রহমতের রাসূল (সা.)–এর জন্মের পনেরো শতাব্দী পূর্তি এমন এক মহান উপলক্ষ, যা মানুষ গঠন, নৈতিকতা, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদার ক্ষেত্রে তাঁর চিরন্তন বার্তার ওপর নতুন করে গভীর চিন্তার এক অনন্য সুযোগ এনে দেয়। ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল-উযমা খামেনেয়ী (দা.বা.) সর্বদা এই সত্যের ওপর জোর দিয়ে এসেছেন যে, রাসূলে ইসলাম (সা.) কেবল ইসলামী সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা নন, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত, যুক্তিবোধ ও মর্যাদার পতাকাবাহী।

ভারতের মতো এক ঐতিহাসিক ও বৈচিত্র্যময় সমাজে—যেখানে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠী শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে—নবীজি (সা.)–এর জীবনচরিতের সঠিক ব্যাখ্যা সামাজিক শান্তি সুসংহতকরণ, পারস্পরিক সম্মান বৃদ্ধি এবং মানবিক ঐক্য গঠনে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। সর্বোচ্চ নেতার মতে, খাঁটি মুহাম্মদী ইসলাম (সা.) সংলাপ, অঙ্গীকার রক্ষা, ন্যায় ও ইনসাফ এবং মানুষের সম্মানের ওপর প্রতিষ্ঠিত এক ধর্ম; যা সব ধরনের সহিংসতা, চরমপন্থা ও বিকৃতি থেকে মুক্ত।

আলেম, শিক্ষক ও গবেষকদের ওপর গুরুদায়িত্ব বর্তায়—তাঁরা যেন গভীর জ্ঞানচর্চা, আন্তরিক গবেষণা ও যুক্তিসংগত উপস্থাপনার মাধ্যমে ইসলামি রহমতধর্মী শিক্ষা এবং রাসূলে মদীনাবাসী (সা.)–এর জীবনচরিতকে সমকালীন চিন্তাগত চাহিদার আলোকে তুলে ধরেন এবং ভুল ধারণা ও বিকৃতির মোকাবিলায় দায়িত্বশীলভাবে অবস্থান নেন।

বিভিন্ন ধর্ম ও মতের সম্মানিত অনুসারীদের মধ্যে নৈতিকতা ও মানবতা একটি মূল্যবান যৌথ সম্পদ, যা গঠনমূলক সংলাপ ও সামাজিক সহযোগিতার ভিত্তি হতে পারে। রাসূলে ইসলাম (সা.) –এর জীবনচরিত—যেমনটি সর্বোচ্চ নেতা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন—শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সম্মান এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষার এক সুস্পষ্ট আদর্শ উপস্থাপন করে এবং শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার যৌথ প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে পারে।

প্রিয় যুবসমাজ ও জ্ঞানপিপাসুগণ! তোমরাই এই বিশাল দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাতা। তোমাদের কাছে প্রত্যাশা—নবীজির (সা.) জীবনচরিতকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে এবং সর্বোচ্চ নেতার প্রজ্ঞাপূর্ণ দিকনির্দেশনার আলোকে জ্ঞানার্জন, নৈতিক চরিত্রগঠন, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও ধর্মীয় পরিচয় সংরক্ষণ—এই সবকিছুকে একত্রিত করে একটি সচেতন, আত্মনির্ভরশীল ও নৈতিক মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা।

রহমতের রাসূল (সা.)–এর জন্মের পনেরো শতাব্দী উপলক্ষে প্রস্তাব করা হচ্ছে—

নবীজির (সা.) জীবনচরিত ও মানবিক মর্যাদা বিষয়ক একাডেমিক ও আন্তধর্মীয় সভা ও সম্মেলন আয়োজন করা;

ভারতে প্রচলিত ভাষাসমূহে গবেষণামূলক, যোগাযোগমূলক ও চিন্তামূলক উপকরণ প্রস্তুত ও প্রকাশ করা;

যুবক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুশৃঙ্খল শিক্ষামূলক কর্মসূচি প্রণয়ন করা;

ন্যায়বিচার, সামাজিক সেবা এবং বঞ্চিত শ্রেণির সহায়তায় জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা।

শেষে, আমি আলেমগণ, জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ, সম্মেলনের আয়োজক এবং সেই সব মানুষের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যারা বিশুদ্ধ নিয়ত ও ঐক্যের চেতনায় নবীজির (সা.) জ্ঞান ও শিক্ষার প্রসারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করা যায়, রাসূলে রহমত (সা.)–এর শিক্ষার আলোকে এ ধরনের প্রচেষ্টা নৈতিক উৎকর্ষ, সামাজিক সম্প্রীতি এবং মানবসমাজের প্রকৃত উন্নয়নের পথ সুগম করবে।

ওয়াসসালামু আলাইকুম
আব্দুল মজিদ হাকিম ইলাহী
ওলি-এ ফকিহের প্রতিনিধি (ভারত)

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha