হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, তেহরানে হুসাইনিয়া আয়াতুল্লাহ আলভী তেহরানীতে অনুষ্ঠিত একটি নৈতিক শিক্ষার দরসে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উস্তাদ আনসারিয়ান বলেন—অনেক মানুষ সামান্য অর্থনৈতিক বা সামাজিক চাপের মুখে পড়লেই আল্লাহকে দোষারোপ করতে শুরু করে, অথচ কুরআন স্পষ্টভাবে জানায় যে এ ধরনের চিন্তা ভ্রান্ত। মানুষের সমস্যার প্রকৃত কারণ তার নিজের সিদ্ধান্ত, আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি।
তিনি আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন—ইমাম (আ.) সৌভাগ্যের তিনটি পথ বর্ণনা করেছেন, যেগুলো অনুসরণ করলে যে কোনো মানুষ, যে কোনো বয়স ও অবস্থায়ই হোক না কেন, সফল হতে পারে। এই পথগুলোর ভিত্তি হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাধারা।
উস্তাদ আনসারিয়ানের মতে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি হয় ইতিবাচক নয়তো নেতিবাচক। আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কেবল কুরআন ও আহলে বাইত (আ.)-এর শিক্ষার মাধ্যমেই অর্জিত হয়। যে ব্যক্তি কুরআনের সঙ্গে জীবন যাপন করে, সে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহকে অভিযুক্ত করে না; আর কুরআন থেকে দূরে সরে যাওয়া মানুষকে হতাশা ও কু-ধারণার দিকে ঠেলে দেয়।
তিনি সূরা ফজরের আয়াতসমূহের উল্লেখ করে বলেন—যখন কোনো ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যের পর সংকটে পড়ে, তখন বলে: “আল্লাহ আমাকে অপমান করেছেন।” অথচ কুরআন সঙ্গে সঙ্গেই এই চিন্তাকে প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহ মানুষকে অপমান করার জন্য পরীক্ষায় ফেলেন না; বরং সমস্যার মূল কারণ অন্যত্র নিহিত থাকে।
নৈতিকতার এই শিক্ষক স্পষ্ট করে বলেন—কুরআন এই দুনিয়াকে সচেতন বলে ঘোষণা করে, যা মানুষের কর্মের প্রতিক্রিয়া দেখায়। জুলুম, অন্যের অধিকার হরণ এবং উদাসীনতা শেষ পর্যন্ত জীবনে জটিলতা ও চাপের রূপ ধারণ করে। কুরআন সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি, কিন্তু মানুষ সহজ পথ বেছে নিয়ে আল্লাহকে দোষারোপ করে।
তিনি আয়াতুল্লাহুল উযমা বুরুজার্দীর একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন—একজন ব্যবসায়ী তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিলেন, যার প্রকৃত কারণ ছিল খুমস পরিশোধ না করা। যখন তিনি খুমস আদায় করলেন, তখন শুধু তার সমস্যাই সমাধান হলো না, বরং তার ব্যবসায় বরকতও ফিরে এলো।
উস্তাদ আনসারিয়ান সূরা ফজরের আলোকে মানুষের ধ্বংসের চারটি কারণও উল্লেখ করেন:
১. এতিমকে সম্মান না করা
২. দরিদ্রকে সাহায্য করতে অবহেলা করা
৩. অন্যের উত্তরাধিকার অন্যায়ভাবে গ্রাস করা
৪. সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা
কুরআন বলে—যখন হৃদয় সম্পদের ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে যায়, তখন সেখানে আল্লাহ ও কল্যাণের জন্য আর কোনো জায়গা থাকে না।
শেষে তিনি কুরআন মাজিদের এই আয়াতটির ব্যাখ্যা করেন:
“তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে; আর যে অকল্যাণ পৌঁছে, তা তোমার নিজের কারণেই।”
তিনি বলেন—প্রত্যেক কল্যাণ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে, আর প্রত্যেক অকল্যাণ মানুষের নিজের কাজের ফল। যে ব্যক্তি আখিরাতকে সামনে রেখে জীবন যাপন করে, সে কখনোই দুর্ভাগা হয় না। প্রকৃত সৌভাগ্য নিহিত আছে আল্লাহভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি, মানুষের অধিকার আদায়, দুর্বলদের সহায়তা এবং ধনসম্পদের মোহ থেকে মুক্তির মধ্যে।
আপনার কমেন্ট