হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তব্যে যুবক ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নামাজ, ইবাদত, ইতিকাফ, ধ্যান এবং ধর্মীয় পাঠ ও আলোচনায় অংশ নিয়ে এই সময়কে সদ্ব্যবহার করার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানিয়েছেন, যার সারসংক্ষেপ পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি:
আত্মশুদ্ধি ও নিজগঠন (৩ জুলাই ২০০৯)
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, রজব মাস, শাবান মাস এবং রমজান মাসে আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত আত্মসংশোধন ও অন্তরের অন্ধকার দূর করা। মানুষের জীবন, নবীদের মিশন, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম—সবই মানুষের আত্মশুদ্ধি ও চিরন্তন জীবনযাত্রার প্রস্তুতি। আমরা যেন জীবনের সীমারেখা পার হওয়ার সময় খুশি ও সন্তুষ্ট থাকি এবং পশ্চাৎপশ্চিম অনুভব না করি। উত্তম নৈতিকতা, ইবাদত, জ্ঞানচর্চা এবং পরিশ্রম—সবই জীবন নামক এই “সাদা পৃষ্ঠাকে সুন্দরভাবে রাঙানো” এবং জীবনকে পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত করার জন্য। প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের সময় ও জীবন একটি মূল্যবান বিনিয়োগ।
রজব মাস: তওবা ও দোয়ার মাস (৩ জুলাই ২০০৯)
রজব মাস ধ্যান, দোয়া, তওবা ও আত্মসংশোধনের মাস। প্রতিনিয়ত ইস্তিগফার করা উচিৎ। নবী করিম (সা.) দৈনন্দিন অন্তত ৭০ বার তওবা করতেন। এই মাসে আমাদের আত্মিক অশুদ্ধি দূর হয় এবং আল্লাহর কাছে আত্মিক শুদ্ধি অর্জন হয়।
আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি (১৫ মে ২০১৩)
রজব মাস শাবান মাসের জন্য প্রস্তুতি। নিজেকে আল্লাহর উপস্থিতি উপলব্ধি করার জন্য খোলা রাখা হয়। সব ইচ্ছা, কাজ ও অন্তরের চিন্তাভাবনা আল্লাহর জ্ঞানের সামনে রাখা—এটি রজব মাসে অর্জনযোগ্য। এই আত্মশুদ্ধি পেয়ে মানুষ রমজান মাসে আল্লাহর সফরে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়।
দোয়া ও ধ্যানের গুরুত্ব (৪ অক্টোবর ২০০১)
রজব মাসে দোয়া ও ধ্যান শুধুমাত্র ভাষার জন্য নয়, অন্তরের গভীরতা উপলব্ধি করা এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা। এটি শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা দেয় এবং আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
নামাজ ও ইবাদত (৫ অক্টোবর ২০০৪)
রজব মাস মূলত নামাজের মাস। শাবান মাসে দোয়া ও রোজার গুরুত্ব বেশি। এই তিন মাস—রজব, শাবান ও রমজান—মানবিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদের সংরক্ষণের সুযোগ। বিশেষ করে যুবকরা এই সময়ের সদ্ব্যবহার করে স্থায়ী আধ্যাত্মিক সম্পদ তৈরি করতে পারে।
ইতিকাফ ও তরুণদের অংশগ্রহণ (১৫ মে ২০১৩)
এ মাসের মধ্যভাগে যুবকরা মসজিদে গিয়ে ইবাদত, ধ্যান, ধর্মীয় পাঠ ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এটি রজব মাসের বরকত। পূর্বে এই প্রচলন খুবই সীমিত ছিল, এখন দেশে সর্বত্র তরুণরা অংশগ্রহণ করে।
তাওহীদ ও আল্লাহর মহিমা (১৫ মে ২০১৩)
রজব মাসের দোয়া ও ইবাদত আল্লাহর একত্ব ও মহিমার প্রতি মনোযোগ দেয়। এ মাসের শুরুতকে ইমাম বাকরের (আ.) জন্মদিন, শেষ দিন নবুয়তের মহান ঘটনা।
আত্মসংযম ও আত্মোন্নয়ন (৪ অক্টোবর ১৯৯২)
রজব মাসে আল্লাহর সঙ্গে অন্তরের সংযোগ দৃঢ় করতে হবে। এই সময়কে ব্যবহার করে শাবান ও রমজান মাসে আত্মিক উন্নয়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিটি দোয়া, তওবা ও ইবাদত আমাদের আধ্যাত্মিক “সংরক্ষণ” এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম।
মৌলিক নির্দেশনা (৭ জুলাই ২০১০, ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৭, ১৪ নভেম্বর ১৯৯৭)
• রজব মাসে তওবা, দোয়া, ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ নিন।
• নিজেকে আল্লাহর দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করুন।
• ইস্তিগফার ও আত্মসংযমকে জীবনধারার অংশ করুন।
• যুবকরা বিশেষভাবে ইবাদত ও ইতিকাফে অংশ নিক।
• এই তিন মাসে আধ্যাত্মিক সম্পদ জমা দিন যাতে রমজান মাসে আল্লাহর সফরে পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করা যায়।
রজব, শাবান ও রমজান—এই তিন মাসকে সদ্ব্যবহার করে আমরা আল্লাহর নৈকট্য, আধ্যাত্মিক শক্তি এবং অন্তরের শুদ্ধি অর্জন করতে পারি। প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্য দিন এবং আল্লাহর দোয়া, দৃষ্টি ও প্রশান্তি অর্জনের জন্য এটি সঠিক সময়।
আপনার কমেন্ট