হাওজা নিউজ এজেন্সি: মরহুম আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদি (রহ.) তাঁর এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় “ধর্মীয় বিশ্বাসে অতিরিক্ত সৌজন্য ও রসিকতার বিপদ” সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, শয়তান সাধারণত এ ধরনের আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর নয়—এমন শব্দ ও অভিব্যক্তিকেই তার কার্যক্রমের সূচনা বিন্দু হিসেবে বেছে নেয়।
খ্রিস্টান সমাজে হযরত ঈসা (আ.)-এর ঈশ্বরত্বে বিশ্বাসের সূচনা হয়েছিল এ বাস্তবতা থেকে যে তাঁর কোনো মানবিক পিতা ছিল না। আল্লাহ তাআলা তাঁকে অলৌকিকভাবে হযরত মারইয়াম (আ.)-এর মাধ্যমে সৃষ্টি করেছিলেন। পবিত্র কুরআনেও এ বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, রূহুল কুদস হযরত মারিয়াম (সা.আ.)-এর কাছে এসে বলেছিলেন—
إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّکِ لِأَهَبَ لَکِ غُلَامًا زَکِیا
“আমি তো তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত এক দূত, যেন আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র দান করি।”
(সূরা মারইয়াম, আয়াত ১৯)
প্রথমদিকে খ্রিস্টানরা রূপক ও সৌজন্যের আশ্রয়ে বলেছিল— যেহেতু হযরত ঈসা (আ.)-এর কোনো মানবিক পিতা নেই, তাই আল্লাহকেই তাঁর পিতা বলা যেতে পারে। এটি ছিল একটি কবিত্বপূর্ণ ও প্রতীকী অভিব্যক্তি। তারা জানত যে আল্লাহ প্রকৃত অর্থে পিতা নন এবং এ কথাও তারা অস্বীকার করত না যে আল্লাহ হযরত মারইয়াম (আ.)-কে বিবাহ করেননি। কিন্তু ধীরে ধীরে এই রূপক বক্তব্যই বাস্তব আকীদায় পরিণত হয়। একসময় বলা হতে লাগল—হযরত ঈসা (আ.) প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর পুত্র। এমনকি পরবর্তীকালে কেউ যদি এই বিশ্বাসে আস্থা না রাখে, তাকে খ্রিস্টান হিসেবেই গণ্য করা হয় না। এভাবেই ত্রিত্ববাদের মতো একটি মৌলিক ও বিতর্কিত আকীদা খ্রিস্ট ধর্মে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদি (রহ.) বলেন, একই ধরনের বিপজ্জনক প্রবণতা ইসলামের ইতিহাসেও দেখা গেছে। বিশেষ করে আহলে বাইত (আ.)-এর ক্ষেত্রে প্রথমদিকে কিছু অতিরঞ্জিত সৌজন্যপূর্ণ বক্তব্য ও আবেগঘন রসিকতার সূচনা হয়েছিল। এ ধরনের বক্তব্য মূলত ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশের উদ্দেশ্যে করা হলেও, কালক্রমে সেগুলোই চরমপন্থা ও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় এমন কিছু গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে, যারা আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে সীমা অতিক্রম করে তাঁকে আল্লাহ হিসেবে আখ্যায়িত করে (নাউযুবিল্লাহ), যা সুস্পষ্ট কুফর ও ভ্রষ্টতা।
তিনি আরও বলেন, শয়তানের কৌশল হলো—মানুষকে প্রথমে একটি ছোট, নিরীহ ও আবেগঘন কথায় অভ্যস্ত করা; এরপর ধীরে ধীরে সেই কথার অর্থ ও পরিধি পরিবর্তন করে তাকে আকীদাগত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া। এজন্যই মুমিনদের জন্য অত্যন্ত জরুরি হলো—ধর্মীয় পরিভাষা, কবিতা, স্লোগান, মার্সিয়া ও আবেগপ্রবণ বক্তৃতায় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং এমন সব রূপক, উপমা ও অতিরঞ্জন পরিহার করা, যা ভবিষ্যতে ভুল ব্যাখ্যা বা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে।
পরিশেষে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ঈমান ও আকীদার বিষয় কোনোভাবেই রসিকতা বা অসতর্ক সৌজন্যের ক্ষেত্র হতে পারে না। আকীদা সুরক্ষিত রাখতে হলে ভাষা, অভিব্যক্তি ও বক্তব্যের সীমারেখা স্পষ্টভাবে রক্ষা করা অপরিহার্য।
সূত্র: আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদি (রহ.), বক্তৃতা, ২১/০৯/২০১৩ (১৩৯২/০৯/২১)
আপনার কমেন্ট