হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, তেহরানের নৈতিকতা বিষয়ক শিক্ষক উস্তাদ মোহাম্মদ বাকের তাহরিরি তার এক বক্তৃতায় রজব মাস সম্পর্কে কিছু উপদেশ দেন। তিনি বলেন,
রজব মাস হলো আল্লাহ তাআলার মাস, যে মাসে তাঁর রহমত প্রবাহিত হয়। এই ঐশী রহমত তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করে, যারা আল্লাহর দয়ালু নির্দেশনার অনুসরণে থাকে। এর প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো ফরজ বিধানসমূহ পালন করা এবং হারাম কাজ থেকে দূরে থাকা। জীবনের সব ক্ষেত্রে আমাদের এ বিষয়টির প্রতি আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।
রজব মাস হলো ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) ও দোয়ার মাস। ইস্তিগফার অন্তরের মলিনতা দূর করার জন্য। কিন্তু যদি মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ও বাস্তবে সেই মলিনতা সৃষ্টি করতে থাকে এবং কেবল ইস্তিগফারেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তার তেমন প্রভাব পড়ে না। আমাদের জীবনের ভিত্তি হওয়া উচিত আনুগত্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে—আল্লাহ তাআলা রজব মাসে সপ্তম আসমানে একজন ফেরেশতাকে নিয়োজিত করেছেন, যিনি রাতের শুরু থেকে সকাল পর্যন্ত বান্দাদের আহ্বান করেন। আমরা যতটুকু এই আহ্বানের বিষয়বস্তুর সঙ্গে নিজেদের মিলাতে পারি, ততটুকুই বাস্তবে সেই আহ্বান শুনেছি। এই আহ্বানের অর্থ হলো:
“তূবা লিল্য্যাকিরীন, তূবা লিত্তায়েঈন”—
অর্থাৎ, “স্মরণকারীদের জন্য সুসংবাদ, আনুগতদের জন্য সুসংবাদ।”
‘তূবা’ অর্থ ‘ধন্য তারা’, তবে প্রকৃত ধন্যতা হলো—মানুষ যদি আমিরুল মুমিনীন (আ.)-এর বেলায়াতের অধীনে থাকে।
এটি কীভাবে অর্জিত হয়? আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে—মৌখিক জিকির ও কার্যকর (ব্যবহারিক) জিকির উভয়ের মাধ্যমেই। ব্যবহারিক জিকিরই হলো আনুগত্য। ব্যবহারিক জিকিরের মূল ভিত্তি হলো জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহর ফরজ বিধানসমূহ বাস্তবায়ন করা। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে তার প্রভাব পড়বেই।
কখনো দেখা যায়, কেউ একটি ফরজ পালন করে কিন্তু অন্যটি পরিত্যাগ করে; কিংবা নামাজ পড়ে কিন্তু গুনাহ থেকে বিরত থাকে না। এসব বিষয় একে অপরের প্রভাবকে কিছুটা নিষ্ক্রিয় করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ নামাজ পড়ে কিন্তু পর্দার ব্যাপারে অবহেলা করে—তার নামাজ ভালো, তবে পর্দাহীনতার ব্যাপারেও কোমল ভাষায় তাকে সতর্ক করা প্রয়োজন।
আমাদের খেয়াল রাখতে হবে—ইতিবাচক দিকগুলোর প্রশংসার পাশাপাশি নেতিবাচক দিকগুলোর ব্যাপারেও নম্র ভাষায় সতর্ক করা জরুরি। আমরা একটি শিয়া দেশে বসবাস করি, যা সবসময় পরিবর্তন ও শত্রুতার মুখোমুখি হয়েছে এবং ইমাম মাহদী (আ.)-এর আবির্ভাব পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকবে। তবে আমাদের ময়দান ছেড়ে চলে যাওয়া কিংবা এই আহলে বাইতের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া উচিত নয়।
রজব মাসে বহু দোয়া রয়েছে, যেগুলোর বিষয়বস্তু অত্যন্ত গভীর। এগুলো থেকে আমাদের গাফেল থাকা উচিত নয়। আমাদের পরিকল্পনা থাকা দরকার—যদি প্রতিদিন সব দোয়া পড়তে না পারি, অন্তত যেন সম্পূর্ণভাবে ভুলে না যাই। নামাজের পরের দোয়াগুলো অত্যন্ত উচ্চমানের অর্থ বহন করে; যেমন দোয়া—“ইয়া মান আরজুহু লি কুল্লি খায়র”। এগুলো পড়া উচিত।
রজব মাস অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাবুস হওয়া (নবুওয়াত প্রাপ্তি), আমিরুল মুমিনীন (আ.)-এর জন্মসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ দিবস রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা যেন এসব উপলক্ষ থেকে গাফেল না থাকি।
আসুন, আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করি—তিনি যেন এই দেশের ওপর তাঁর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ ও স্থায়ী করেন এবং ইমাম মাহদী (আ.)-এর অনুগ্রহ এই জাতির অন্তর্ভুক্ত করেন।
এই বিপ্লব, ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য নেতৃত্ব—হযরত ইমাম (রহ.) ও সম্মানিত সর্বোচ্চ নেতার মাধ্যমে—সব প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমস্যার মধ্যেও আল্লাহর অনুগ্রহে সংরক্ষিত রয়েছে। বহু ষড়যন্ত্র আল্লাহর দয়ায় ব্যর্থ হয়েছে। ঐশী অনুগ্রহ এই মহান নেতার ওপর রয়েছে, যিনি নিজেকে আমিরুল মুমিনীন, আহলে বাইত ও ইমাম মাহদী (আ.)-এর নেতৃত্বের পথে উৎসর্গ করেছেন।
আমাদেরও উচিত—এই হৃদয়ের সম্পর্ক, বাস্তব আমলের সম্পর্ক এবং দোয়ার সম্পর্ক সর্বদা বজায় রাখা।
আপনার কমেন্ট