হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, দখলদার ইসরায়েলের বর্বর হামলায় গাজার বেশিরভাগ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন। বাড়িঘর হারিয়ে তাদের বড় অংশ এখন অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছেন। সেখানেও ইহুদিবাদী বাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ড থেমে নেই। এরই মধ্যে শীতের মৌসুম আসার পর গাজায় তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসিতে ঠান্ডায় জমে তিন শিশু মারা গেছে। এ যেন মরার উপর খরার ঘা।
ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েল গাজার মানুষকে শুধু বাস্তুচ্যুত করেনি; সঙ্গে তারা খাদ্য, পানি এবং শীতের প্রয়োজনীয় পণ্য গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এতে নিদারুণ কষ্টে পড়েছেন সেখানকার মানুষ।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের পরিচালক আহমেদ আল-ফাররা বৃহস্পতিবার বলেন, তিন সপ্তাহ বয়সি এক নবজাতকের নতুন করে মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ৪৮ ঘণ্টায় আমাদের কাছে পাঁচ দিন ও এক মাস বয়সি আরও দুটি নবজাতককে আনা হয়। তারাও ঠান্ডাজনিত কারণে মারা গেছে।
ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলের হামলায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজার হাজার মানুষ তাঁবু টানিয়ে রাত কাটাচ্ছে। সেখানে শীতের রাতে উষ্ণ থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সিলা মাহমুদ আল-ফাসী নামক আরেকটি শিশুর দেহ অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। ডাক্তাররা শিশুটির কাছে পৌঁছানোর আগেই শিশুটির ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাকে হাইপোথার্মিয়া (শীতজনিত মৃত্যু) থেকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
চিকিৎকরা বলেন, সকালে যখন তার মা তাকে স্তন্যপান করাতে যাচ্ছিলেন, ঠান্ডার কারণে আমরা শিশুটিকে নীল হয়ে মুখ থেকে রক্ত বের হতে দেখে পাই।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ড. মুনির আল-বুরশ সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, অনেক শিশু শীতের তীব্রতার কারণে মারা গেছে।
আরেকটি পোস্টে তিনি গাজার তাঁবুগুলোকে ‘মৃত্যুর ফ্রিজ’ বলে বর্ণনা করেছেন, শীতের কারণে আরও দুইটি শিশুর মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেছেন।
খান ইউনিস হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান আহমেদ আল-ফাররা জানিয়েছেন, শিশুগুলো ছিল তিন দিন এবং এক মাস বয়সি।
তিনি বলেন, এই মৃত্যুগুলি গাজার পরিস্থিতির গুরুতর অবস্থা তুলে ধরে, ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ থেকে বাঁচতে সেখানে কয়েক লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবার অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘ আহ্বান জানিয়ে বলেছে, গাজার স্কুল, হাসপাতালে সব জায়গায় হামলা হচ্ছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি অতিপ্রয়োজনীয়, যা দীর্ঘ বিলম্বিত হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বের সব দেশকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
এসবের মধ্যে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ে জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করেছিলেন ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির। এ নিয়ে জেরুজালেমে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। উগ্রপন্থি বেন গিভির যেন নিরাপদে প্রার্থনা করতে পারেন, সেজন্য আল-আকসা চত্বরে ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছিল ইসরাইল। যদিও চুক্তি অনুযায়ী, ইহুদিদের আল-আকসায় প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ। ওই সময় মসজিদে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সূত্র: মিডেল ইস্ট আই
আপনার কমেন্ট