মঙ্গলবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ১৬:৩১
ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর মা সম্পর্কিত সন্দেহ ও বিতর্কের অবসান

৫ম শাবান, ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.)-এর পবিত্র জন্মের দিন। এই দিনে তাঁর (আ.) মা শাহার বানু-এর জীবনের রহস্য ও বিতর্ক সম্পর্কিত একটি গবেষণা তথ্য আমাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা সমীচীন মনে করছি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমাম সাজ্জাদ (আ.) মা শাহার বানু-এর জীবনের রহস্য ও বিতর্ক সম্পর্কিত গবেষণা তথ্য নিম্নরূপ:

ইমাম সাজ্জাদের মা
ঐতিহাসিক রেওয়ায়ত অনুসারে, ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর মা একজন সম্ভ্রান্ত ও সতী ইরানী মহিলা ছিলেন, যার নাম শাহার বানু বা শাহ জানান। বলা হয় যে ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর জন্মের সময় তিনি মারা যান, তাই ইমাম তাঁর মাকে দেখতে থেকে বঞ্চিত হন। এই রেওয়ায়েত অনুসারে, তিনি কারবালায় অর্থাৎ ৬১ হিজরিতে পৃথিবীতে আসলে উপস্থিত ছিলেন না, তাই কারবালার ট্র্যাজেডিতে তার উপস্থিতির ধারণা ভিত্তিহীন।

বহুল প্রচলিত সন্দেহ এবং তার জবাব:
১. শাহারবানু তৃতীয় ইয়াজগার্ডের কন্যা ছিলেন: ইমাম সাজ্জাদের (আ.) মা সাসানি রাজা তৃতীয় ইয়াজগার্ডের কন্যা ছিলেন এই রেওয়ায়েতটি কিছু ঐতিহাসিক সূত্রে পাওয়া যায়, তবে এর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

২. কারবালার পরে ইরানে হিজরতের গল্প: আশুরার ঘটনার পরে শাহারবানু ইরানে গিয়ে পাহাড়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন এই রেওয়ায়েতটি কেবল একটি কাল্পনিক গল্প এবং এর কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।

আল্লামা শেখ মুফিদের গবেষণা
আল্লামা শেখ মুফিদের মতে, হযরত আলী (আ.)-এর শাসনামলে কিছু ইরানী বিদ্রোহ করেছিল, যা তার নিযুক্ত শাসক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই সময়ে কিছু ইরানী মহিলাকে বন্দী করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন শাহারবানু। যখন তিনি হযরত আলী (আ.)-এর দরবারে আসেন, তখন ইমাম আলী (আ.)’র মহত্ত্ব এবং উত্তম চরিত্র দেখে সে মুগ্ধ হন এবং তাঁকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্ত হযরত আলী (আ.) বলেন যে, সে (সাহার বানু) যদি চান, তাহলে তাঁর পুত্র ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সাথে তাঁর বিবাহ দেওয়া যেতে পারে! ইমাম আলী (আ.)’র প্রস্তাব সে গ্রহণ করেন এবং ইমাম হুসাইন (আ.)’র স্ত্রী হওয়ার সম্মান লাভ করেন।

এই বর্ণনাটি অন্যান্য বর্ণিত বর্ণনার তুলনায় অধিক নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয় এবং প্রথম তিন খলিফার খেলাফতের বিজয়ের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

জনাবা শাহরবানুর সমাধি
কিছু বর্ণনায় বলা হয়েছে যে শাহার বানুর সমাধি ইরানে অবস্থিত, তবে এটি একটি ঐতিহাসিক ভুল। যেহেতু তিনি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর জন্মের সময় মারা গিয়েছিলেন, তাই কারবালায় তাঁর উপস্থিতি বা পরে তাঁর ইরানে যাওয়া ঘটনা সত্য নয় বরং তা কেবলই কাল্পনিক গল্প।

যদি এমনটি হত যে কেউ কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা, সেই সময়ের বন্দীদশা এবং কঠিনতম অবস্তা থেকে মুক্তি পেতে চায়, তাহলে ইমাম সাজ্জাদ (আ.) এবং তাঁর পরে ইসলামের মহান নারী হযরত জয়নাব (সা.আ.)-এর চেয়ে অধিক কষ্ট ও দুর্দশার সহ্যকারী আর কে আছেন? অতএব, এটা সম্ভব নয় যে আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের শৃঙ্খলে আবদ্ধ একজন নারী এবং ইমাম হুসাইন (আ.)’র স্ত্রী মুক্তি চাইবেন এবং কারবলার বন্দীদের থেকে নিজেকে আলাদা করে অন্য কোথাও চলে যাবেন। তাই এই গল্পটি অযৌক্তিক,  বানোয়াট এবং অগ্রহণযোগ্য।

ইমাম সাজ্জাদের (আ.) হেকমতপূর্ণ সিদ্ধান্ত

কারবালা ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) রাজনৈতিক অঙ্গনে উপস্থিতি এবং ইয়াজিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিদ্রোহকে নিষ্ফল বলে মনে করতেন এবং বিশ্বাস করতেন যে যতক্ষণ সমাজ সত্যের দিকে রূপান্তরিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত না মানুষের ঈমানের ভিত্তি মজবুত হয় এবং পবিত্র আহলে বাইত (আ.)-এর মারেফাত অর্জন ও তাদের পবিত্র সত্ত্বার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে উপস্থিতি আত্ম-ধ্বংস এবং অত্যাচারীদের শাসনের ধারাবাহিকতার সমতুল্য।

ইমাম জয়নুল আবেদীন (আ.) সশস্ত্র সংগ্রামের চেয়ে দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে মানুষের আত্মশুদ্ধ করাকে অধিক পছন্দ করতেন। তাঁর মতে যতক্ষণ না মানুষের মধ্যে খোদায়ী জনসচেতনতা জাগ্রত হয় এবং আহলে বাইত (আ.)-এর মারেফাত অর্জিত না হয়, ততক্ষণ সশস্ত্র সংগ্রাম কোনো কাজে আসবে না, বরং তা জালেম সরকারকে আরও শক্তিশালী করবে।

তথ্যসূত্র:

১. হামাসা হুসাইনি, শহীদ মুর্তজা মোতাহারী

২. ওস্তাদ রজবী (তাসনিম নিউজের সাথে সাক্ষাৎকার)

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha