সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ০৯:২১
ইসলামী বিপ্লব মুসলিম নারীদের সমাজে শক্তিশালী করেছে

হাওজা / এক সাংস্কৃতিক কর্মী বলেছেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে মুসলিম নারীদের সমাজে তাদের ভূমিকা সুসংহত করেছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মুজতাবা নাজাফি হাওজা নিউজ-এর প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ইরানের ইসলামী বিপ্লব মুসলিম নারীদের পরিচয় ও ভূমিকায় এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে। বিপ্লবের বিজয়ের পর, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে নারীরা সমাজে নতুন ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে, এখনো তাদের পরিচয় নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সামাজিক ও মিডিয়ার চাপ, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং বিশ্বায়নের প্রভাব নারীদের পরিচয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।

নারী ও মাতৃত্ব: ফাতেমি আদর্শের গুরুত্ব

তিনি বলেন, আধুনিক মুসলিম নারীদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ তাদের মাতৃত্বের ভূমিকা। ফাতেমি আদর্শ (হযরত ফাতিমা জাহরা [সা.]-এর জীবনচর্যা) প্রেম, ত্যাগ ও সঠিক পারিবারিক ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়, যা নারীদের সন্তানদের সঙ্গে আরও গভীর আবেগিক ও শিক্ষামূলক সম্পর্ক গড়তে সহায়তা করে। পরিবারে পারস্পরিক সহযোগিতা, দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া এবং পেশাগত ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হযরত ফাতিমা (স.) একজন আদর্শ মা হিসেবে সন্তানদের যথাযথ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে সঠিক ব্যবস্থাপনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সমাজ ও রাজনীতিতে মুসলিম নারীদের ভূমিকা

কোম প্রদেশের গফতগু-ই ইনকিলাব-ই ইসলামী (ইসলামী বিপ্লব সংলাপ সংঘ) গবেষণা বিভাগের সহকারী পরিচালক বলেন, হযরত ফাতিমা (স.) শুধুমাত্র একজন আদর্শ মা নন, বরং তিনি মুসলিম নারীদের জন্য এক রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুপ্রেরণা। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ও আচরণ ন্যায়বিচার, সাহস ও ধার্মিকতার প্রতীক। ইসলামী বিপ্লব এই আদর্শকে গুরুত্ব দিয়ে নারীদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় হতে উৎসাহিত করেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের ভূমিকা এই আদর্শেরই প্রতিফলন।

নারীর কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের ভারসাম্য

তিনি আরও বলেন, আধুনিক সমাজে মুসলিম নারীদের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ তাদের পেশাগত ও পারিবারিক দায়িত্বের মধ্যে সমতা রক্ষা করা। কর্মক্ষেত্রে নারীদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি, অর্থনৈতিক চাপ এবং ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণের তাগিদ—এসব বিষয় তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারিবারিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই ভারসাম্য অর্জন সম্ভব।

সন্তান প্রতিপালন: সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ

হুজ্জাতুল ইসলাম নাজাফি বলেন, সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালন আধুনিক সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অর্থনৈতিক চাপ, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও নারীদের বহুমুখী ভূমিকা এসব চ্যালেঞ্জের কারণ। তবে, ফাতেমি আদর্শ সন্তানদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়, যা নারীদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, শক্তিশালী পারিবারিক বন্ধন গড়ে তোলা, সন্তানদের মানসিক ও আবেগিক চাহিদার প্রতি মনোযোগ দেওয়া-এসবই ফাতেমি আদর্শ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, যা পরিবারকে শক্তিশালী করতে পারে।

মিডিয়া ও প্রযুক্তির প্রভাব

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, মিডিয়া ও প্রযুক্তি নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে 'জেনারেশন জেড' (Gen Z)-এর ব্যক্তিগত পরিচয় গঠনে বিশাল ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আধুনিক প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব তরুণদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয় সংকটে ফেলতে পারে। সঠিক ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট তৈরি, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রচার এবং সহায়ক সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ফাতেমি আদর্শ নতুন প্রজন্মকে আধুনিক প্রযুক্তির মুখোমুখি হওয়ার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয় বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha