হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন আমরা “জীবন গঠনকারী আয়াত” নিয়ে হাজির হওয়া হচ্ছি। এই সিরিজে কুরআনের আয়াত ও সংক্ষিপ্ত তাফসির উপস্থাপন করা হয়, যা জীবনের পথনির্দেশক এবং সৌভাগ্যের উৎস। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা রমজান মাসের দিনগুলোকে আল্লাহর বাণী দ্বারা আলোকিত করার চেষ্টা করব।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আব্বাস আশজা ইসফাহানি:
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ"
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিক অনুমান ও সন্দেহ থেকে দূরে থাকো। নিশ্চয় কিছু সন্দেহ গুনাহ। আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয় তোমরা তা অপছন্দ করবে। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।”
গিবত ও এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব
বিসমিল্লাহির র’হমানির র'হিম
সূরা হুজরাতের ১২ নং আয়াত গিবতের বিষয়ে আলোচনা করেছে, যা একটি অত্যন্ত জঘন্য, নিকৃষ্ট ও ধ্বংসাত্মক গুনাহ।
গিবত হারাম হওয়ার মূল কারণ হলো এটি মানুষের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে।
এই আয়াতটি গিবতের বৈশিষ্ট্য এবং এই নৈতিক দুর্বলতার প্রকৃতিকে খুব ভালোভাবে চিত্রিত করেছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا..."
লক্ষ্য করুন, কুরআনের সমস্ত সম্বোধন মূলত মানুষের ঈমানের ভিত্তিতে।
অন্য কথায়, ঈমানের দাবি হলো মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলবে।
আয়াতে আরও বলা হয়েছে:
اجتنبوا کثیراً من الظن...
অর্থাৎ, তোমরা অধিক অনুমান ও সন্দেহ থেকে দূরে থাকো।
এটি মনে রাখা জরুরি যে কিছু সন্দেহ বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে) প্রয়োজনীয় হতে পারে, তবে অনেক ধরনের সন্দেহ পরিহার করা উচিত।
আল্লাহ সরাসরি বলেছেন যে অনেক সন্দেহ গুনাহ:
"إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ..."
অর্থাৎ, এমনকি মনের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া সন্দেহও গুনাহ হতে পারে এবং মানুষকে তা থেকে দূরে থাকতে হবে।
গিবতকারীর আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আশা
আয়াতে আরও বলা হয়েছে:
"وَلَا تَجَسَّسُوا"
যখন মানুষের মধ্যে অন্য ব্যক্তির প্রতি খারাপ ধারণা বা সন্দেহ তৈরি হয়, তখন এটি প্রায়শই অনুসন্ধানে রূপ নেয়; অর্থাৎ ব্যক্তি তার সন্দেহ প্রমাণ করার চেষ্টা করে এবং অন্যের ব্যক্তিগত জীবনে অনুসন্ধান শুরু করে। এই অনুসন্ধান নিজেই একটি অতিরিক্ত গুনাহ।
যদি মানুষ এই খারাপ ধারণাকে থামাতে না পারে, তবে এই দুষ্টচক্র অব্যাহত থাকে এবং গিবতে রূপ নেয়। আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন:
"وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا"
অর্থাৎ, তোমরা একে অপরের গিবত করো না।
এরপর আল্লাহ তাআলা একটি অত্যন্ত স্পষ্ট ও চমকপ্রদ উদাহরণ দিয়েছেন, যা কল্পনা করলে যে কেউ গিবতের কাজ থেকে বিরত হবে:
"أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا"
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?
এই কাজটি এতটাই জঘন্য ও ঘৃণিত যে কেউই এটি করতে চাইবে না।
আল্লাহ বলেন, যেমনভাবে তোমরা মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে ঘৃণা করো, তেমনিভাবে গিবতকেও তোমাদের ঘৃণা করা উচিত।
কারণ গিবতের মাধ্যমে তোমরা মূলত তোমাদের মুমিন ভাইয়ের ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করো, তার সাথে অন্যদের সম্পর্ক নষ্ট করো এবং সামাজিক পর্যায়ে গিবত বিভেদ সৃষ্টি করে এবং জাতীয় ঐক্যকে ধ্বংস করে।
আয়াতের শেষে আল্লাহ তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন:
"وَاتَّقُوا اللَّهَ..."
অর্থাৎ, আল্লাহকে ভয় করো। গিবত থেকে বাঁচতে এই তাকওয়া অপরিহার্য।
এরপর তিনি বলেন:
"إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَحِيمٌ"
অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।
আয়াতের এই অংশটি ইঙ্গিত দেয় যে যদি কেউ গিবতের গুনাহে জড়িয়ে পড়ে, তবে সে আন্তরিক তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে পারে এবং আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে পারে, কারণ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
আমাদের সকলের উচিত গিবত থেকে দূরে থাকা এবং যদি কেউ এতে জড়িয়ে পড়ে, তবে আন্তরিক তাওবা করার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা লাভের চেষ্টা করা।
আপনার কমেন্ট