শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫ - ১৪:১৩
কেন কিছু নামাজি প্রশান্তি পায় না?

মহান আল্লাহ ধৈর্য ও নামাজকে সমস্যার সমাধানের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তিনি জোর দিয়েছেন যে এই পথ কেবল বিনয়ী ব্যক্তিদের জন্য সহজ। অনেক নামাজি নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, যা প্রমাণ করে যে তাদের নামাজে প্রয়োজনীয় বিনয় গঠিত হয়নি। এই বিনয়ের অভাবই নামাজের গভীর ও প্রশান্তিদায়ক প্রভাব অর্জনের প্রধান বাধা।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র রমজান মাসে প্রতিদিন “জীবন গঠনকারী আয়াত” নিয়ে আপনার সঙ্গে আছি, আমাদের সাথেই থাকুন; কুরআনের আয়াতের সংক্ষিপ্ত ও প্রায়োগিক তাফসিরের একটি সিরিজ, যা জীবনের পথনির্দেশক এবং সৌভাগ্যের উৎস। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা পবিত্র রমজান মাসের দিনগুলোকে আল্লাহর বাণী দ্বারা আলোকিত করব। 

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন হাদি হোসেন খানি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সূরা বাকারার ৪৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
«وَاسْتَعِینُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَکَبِیرَةٌ إِلَّا عَلَی الْخَاشِعِینَ»

অর্থাৎ, সমস্যা সমাধানের জন্য ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, এবং নিশ্চয়ই এটি কঠিন, তবে বিনয়ী ব্যক্তিদের জন্য নয়; যারা নিজেদের জন্য কোনো অহংকার বা মর্যাদা দাবি করে না।

এই পবিত্র আয়াতটি বেশ কিছু মূল্যবান বিষয় ধারণ করে। 

প্রথমত, মহান আল্লাহ আমাদের শেখাচ্ছেন যে কঠিন সময় ও সংকটে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ব্যবহার করতে পারি: “ধৈর্য ও নামাজ!”

এই দুটি জীবনের চলার পথে অত্যন্ত কার্যকর সাহায্যকারী। অনেক মহান ব্যক্তি ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা সমস্যার মুখোমুখি হলে নামাজের আশ্রয় নিতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তাদের মানসিক ও ইলমি জটিলতার সমাধান করতেন। 

তবে এই আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সূক্ষ্ম বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন, “এটি করা কঠিন; নামাজ পড়া ও ধৈর্য ধারণ করা কঠিন, তবে ‘বিনয়ী’ ব্যক্তিদের জন্য নয়।” 

দুর্ভাগ্যবশত, কিছু মানুষ এই কঠিনতার কারণে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকে এবং নিজেদেরকে এই ঐশী অনুগ্রহ ও রহমত থেকে বঞ্চিত করে। 

অন্য কিছু মানুষ নামাজ পড়ে এবং ফরজ আদায় করে, কিন্তু তাদের হৃদয়ে প্রয়োজনীয় খুশু বা বিনয় গড়ে তোলে না। 

এই কারণে, নামাজ শেষে «আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ» বলার সাথে সাথেই তারা চারদিকে তাকায়, উঠে দাঁড়ায় এবং দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। 

এই আচরণ প্রমাণ করে যে নামাজের যে গভীর প্রভাব ও পরিবর্তন হওয়া উচিত, তা তাদের মধ্যে ঘটেনি। 

«খুশু» শব্দের প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে, তবে «বিনয়ী বা আত্মা অহংকারহীন» এই ধারণার কাছাকাছি হতে পারে; অর্থাৎ এমন একজন মানুষ যে নিজের জন্য কোনো অহংকার বা মর্যাদা দাবি করে না এবং নিজেকে মহান আল্লাহর সামনে তুচ্ছ মনে করে। 

যখন কোনো ব্যক্তি নিজের মধ্যে এই অবস্থা গড়ে তোলে, তখন নিশ্চয়ই নামাজ তার জন্য অত্যন্ত কার্যকর হবে এবং এই মূল্যবান ইবাদতের মাধ্যমে সে জীবনের জটিলতম চ্যালেঞ্জগুলোকেও সমাধান করতে সক্ষম হবে। 

অতএব, নামাজের আধ্যাত্মিক শক্তি থেকে উপকৃত হওয়ার প্রধান শর্ত হলো মহান আল্লাহর সামনে সম্পূর্ণ বিনয় ও নম্রতা।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha