হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ত্রাণকর্তার আগমনের প্রতিশ্রুতি সব ধর্মের শিক্ষায় দেখা যায়, যদিও পার্থক্য রয়েছে এই বিশ্বাসে যে, শিয়া মুসলিমদের মতে, মানবজাতির ত্রাণকর্তা বর্তমানে মানুষের মাঝেই বসবাস করছেন, তবে অজানা রূপে-যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তাঁকে আত্মপ্রকাশের অনুমতি দেন। অতএব, শিয়াদের মতে "জুহুর" বা আবির্ভাব মানে হচ্ছে ত্রাণকর্তার পরিচিত হওয়া।
আপনি হয়তো নিজেকে এই প্রশ্নটি করেছেন: কেন আমাদের পৃথিবী, যা হওয়া উচিত ছিল ভালোবাসা ও মমতায় পরিপূর্ণ, তা আজ পরিপূর্ণ অন্যায় ও অত্যাচারে? একজন মানুষ কতদিন এই অবিচার ও বৈষম্য সহ্য করবে?
কেন কিছু মানুষ অত্যাচারীদের নিপীড়নের কারণে চরম দারিদ্র্যে বাস করছে এবং তাদের মৌলিক চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না? কেন কিছু মানুষ কেবল ত্বকের রঙের জন্য নিগৃহীত হয়? কেন না খেয়ে কঙ্কালসার হয়ে যাওয়া শিশুদের আমাদের দেখতে হয়? কতদিন আমরা নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি যুদ্ধবিমান দ্বারা ধ্বংস হতে দেখব? কতদিন আমরা সেই বাবা-মা’দের দেখব, যারা রক্তাক্ত নিথর সন্তানদের কোলে নিয়ে কাঁদছে?
এই সকল সমস্যার সমাধান কার দ্বারা হবে? কে এসব অন্যায়ের বিচার করবে? কোন আদালতে এই নিপীড়িতদের জন্য ন্যায় বিচার হবে?-এ রকম আরও বহু প্রশ্ন একজন বিবেকবান মানুষের মনকে আন্দোলিত করে।
কিন্তু শুধু পার্থিব প্রশ্ন নয়, আরও গভীর কিছু প্রশ্নও আছে যা একজন চিন্তাশীল মানুষকে ভাবায়।
উদাহরণস্বরূপ: এই জীবনের অর্থ কী? সেই সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন, যিনি এত জটিল ও বিস্ময়কর বিশ্বজগতকে এতো নিখুঁতভাবে সাজিয়েছেন এবং প্রতিটি কিছুর জন্য একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ করেছেন? এই পথনির্দেশনা এবং সম্পর্ক থেকে আমি কীভাবে দূরে থাকতে পারি?
এই প্রশ্নগুলো উপেক্ষা করা যায় না, কারণ আমরা মানুষ হিসেবে যুক্তিবোধ দ্বারা অলংকৃত। সেই বুদ্ধি আমাদের ভাবতে শেখায়। কিন্তু যদি মানুষের সমগ্র অস্তিত্ব কেবল ইন্দ্রিয়সুখ ও পশুবৃত্তিতে নিমগ্ন থাকে, তবে তা হবে এক বিশাল ও দুর্ভাগ্যজনক ক্ষতি।
এই প্রশ্ন ও ভাবনাগুলো আমাদের অন্বেষণ করতে উদ্বুদ্ধ করে-এমন কিছু বা কাউকে খোঁজার জন্য, যিনি আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন এবং আমাদের যন্ত্রণার উপশম হতে পারবেন।
এটাই সেই জিনিস, যাকে বলা হয় "আশা" -পথপ্রদর্শনের আশা, মুক্তির আশা, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা। এই আশা ও মুক্তি একজন "ত্রাণকর্তা" বা "পথপ্রদর্শক"-এর রূপে প্রকাশ পায়। এমন একজন, যার আগমনের সুসংবাদ সব ধর্মেই দেয়া হয়েছে।
ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম, জরথুস্ত্রী, হিন্দু, বৌদ্ধ-এমনকি যারা কোনো ধর্ম মানে না, তারাও ত্রাণকর্তার আগমনকে তাদের অটুট বিশ্বাসের অংশ মনে করে। এই বিশ্বাস দুর্দিনে তাদের শান্তি দেয়, তাদের দুঃখ ও বেদনার প্রলেপ হয়।
ইসলামে ত্রাণকর্তার আগমনের সুসংবাদ
ইসলামে, বিশেষত শিয়া মতবাদে, ত্রাণকর্তার আগমনের ব্যাপারে বারবার বলা হয়েছে। তিনি আসবেন এবং পৃথিবীকে, যা বর্তমানে অন্যায় ও অবিচারে পরিপূর্ণ, ন্যায় ও ইনসাফে পূর্ণ করে তুলবেন। তিনি হবেন নির্যাতিতদের আশার আলো এবং অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিরোধ। তাঁর আবির্ভাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি তাঁর দয়া পূর্ণরূপে প্রদর্শন করবেন।
শিয়া বিশ্বাস অনুযায়ী, মানবজাতির সেই ত্রাণকর্তা বর্তমানে মানুষের মধ্যেই রয়েছেন, অজানা অবস্থায়-যতক্ষণ না মহান আল্লাহ তাঁকে আত্মপ্রকাশের অনুমতি দেন। অতএব, শিয়াদের মতে "জুহুর" মানে হচ্ছে ত্রাণকর্তার পরিচিত হওয়া।
এই আলোচনা চলমান...
আপনার কমেন্ট