রবিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৫ - ১২:৪৬
সামাজিক ফিকহই আধুনিক ইসলামী সভ্যতার ভিত্তি

আয়াতুল্লাহ ফাজেল লংকরানি সামাজিক ফিকহের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন: আজকের দিনে হাওজা শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামাজিক ফিকহকে ইসলামী সভ্যতা নির্মাণের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনায় নিতে হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মাশহাদ থেকে, ফিকহে আইমা (আ.) কেন্দ্রের প্রধান আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ ফাজেল লংকরানি, শনিবার ৬ই ওর্দিবেহেশ্ত মাসে টেলিভিশনের ‘দারুল ইলম’ নামক অনুষ্ঠানের অষ্টম পর্বে অংশ নিয়ে ইসলাম ধর্মে ইসলামী শাসনব্যবস্থার তাত্ত্বিক ভিত্তিগুলো ব্যাখ্যা করেন। তিনি "ইসলামই হচ্ছে শাসনব্যবস্থা" এই কৌশলগত তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে জোর দিয়ে বলেন: পূর্ণ ইসলামী ধর্মের বাস্তবায়ন ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া সম্ভব নয়।

এই টেলিভিশন সংলাপে, তিনি ইসলাম ধর্মে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন এবং সামাজিক ফিকহের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করে ইসলামী সভ্যতা গঠনে ইসলামী শাসনের ভূমিকা পর্যালোচনা করেন।

ইসলাম: একটি সর্বাঙ্গীন ও বহু-মাত্রিক ধর্ম

আয়াতুল্লাহ ফাজেল লংকরানি ইসলাম ধর্মের সর্বাঙ্গীনতার ওপর জোর দিয়ে বলেন: ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত উপাসনা ও নৈতিক শিক্ষার সমষ্টি নয়; বরং এর একটি বিশাল অংশ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে।

তিনি ধর্মের সংকীর্ণ ব্যাখ্যার সমালোচনা করে বলেন: ইসলাম এমন এক জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কেবল নামাজ ও রোজার মতো উপাসনার মধ্যে ইসলামকে সীমাবদ্ধ করা যায় না; সামাজিক ও শাসনব্যবস্থাগত দিক ছাড়া ধর্ম অসম্পূর্ণ এবং অকার্যকর হয়।

তিনি বলেন: কুরআন ও নবী (সা.) এবং আহলে বাইত (আ.)-এর সুন্নাহ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে ইসলাম একটি ন্যায়ভিত্তিক ও তাওহিদভিত্তিক সামাজিক ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এসেছে।

ইসলামী শাসনব্যবস্থা: ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ

তিনি ইমাম খোমেনী (রহ.)-এর রাজনৈতিক চিন্তাধারার উল্লেখ করে বলেন: ইমাম খোমেনী (রহ.) এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইসলাম নিজেই শাসনব্যবস্থা; অর্থাৎ ইসলামী শাসন ধর্মের মৌলিক গঠনভিত্তিক অংশ, বাহ্যিক বা অতিরিক্ত কিছু নয়।

আয়াতুল্লাহ ফাজেল লংকরানি ব্যাখ্যা করেন: ইসলাম কেবল আধ্যাত্মিক ও ব্যক্তিগত শিক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নির্যাতিতদের অধিকার রক্ষা, আল্লাহর নির্ধারিত বিধান কার্যকর করা, অর্থনৈতিক সম্পর্ক পরিচালনা ও সামাজিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্যও স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া ধর্মের এই দায়িত্ব পূর্ণতা পায় না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন: ধর্ম থেকে শাসনকে পৃথক করা — যেমনটি ভুলভাবে কিছু ব্যাখ্যায় বলা হয় — ইসলামের মূল নীতির পরিপন্থী এবং এটি ধর্মের বিকৃতি।

কুরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ: ইসলামী শাসনের অপরিহার্যতা

তিনি বলেন: কুরআনের বহু আয়াত ইসলামী শাসনের অপরিহার্যতার ওপর সুস্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করেছে। যেমন সূরা নিসার ৫৯ নম্বর আয়াত:

"আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসুলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বপ্রাপ্তদের (ওলি আল-আমর) আনুগত্য করো।"

তিনি ব্যাখ্যা করেন: এই আয়াত কেবল ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা নয়, বরং একটি গঠিত শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাও বোঝায়।

এছাড়া, তিনি সূরা নিসার ১৪১ নম্বর আয়াত উল্লেখ করেন:

 "আল্লাহ কখনো কাফিরদেরকে মুমিনদের উপর আধিপত্য দেবেন না।"

তিনি বলেন: এই আয়াত স্পষ্ট করে যে মুমিনদের উপর অবিশ্বাসীদের কর্তৃত্ব আল্লাহর দৃষ্টিতে অবৈধ, এবং এটি কেবল একটি স্বাধীন ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই সম্ভব।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha