বুধবার ৭ মে ২০২৫ - ১৫:৩৮
কোম হাওযা ইলমিয়া সমসাময়িক বিশ্বে শিয়া মুসলিমদের জ্ঞান ও ধর্মীয় জাগরণের পতাকাবাহক

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সৈয়দ কালব জাওয়াদ নকভী হাওযা নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "কোম হাওযা ইলমিয়া" বর্তমান বিশ্বের ধর্মীয় জাগরণ এবং আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষার প্রসারে একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম হাওযা ইলমিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে বরেণ্য আলেমরা এই পবিত্র নগরীতে একত্রিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের অন্যতম বিশেষ অতিথি হলেন ভারতের উলামা পরিষদের সভাপতি হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সৈয়দ কালবে জাওয়াদ নকভী—যিনি বহু বছর ধরে ভারতের শিয়া যুবসমাজের ধর্মীয় শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এই সম্মেলনের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে নেওয়া একটি সাক্ষাৎকার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো:

এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে আপনি কেমন অনুভব করছেন এবং কোম হাওযার মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?
সৈয়দ কালবে জাওয়াদ নকভী: এই মহান সম্মেলনে অংশগ্রহণ আমার জন্য একটি সৌভাগ্যের সুযোগ। কোম হাওযা ইলমিয়া বিগত একশো বছরে যে জ্ঞান ও আধ্যাত্মিক অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা কুরআন ও হাদিসে বিদ্যার মর্যাদার বাস্তব উদাহরণ। কোম-এর পবিত্র পরিবেশ এবং আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষার প্রচারে আলেমদের নিরলস প্রচেষ্টা এই হাওযার গভীরতা ও গুরুত্বকে প্রমাণ করে। এখানে এসে মানুষ বুঝতে পারে ইসলামে জ্ঞান ও আলেমদের অবস্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার দৃষ্টিতে কোম হাওযার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
সৈয়দ কালবে জাওয়াদ নকভী: প্রথমেই বলতে হয়, কোম হাওযা ইলমিয়ার শিক্ষাগত ব্যবস্থার বিস্তৃতি অসাধারণ। যদিও নাজাফ হাওযার একটি ঐতিহাসিক অবস্থান রয়েছে, কোম হাওযা বিশ্বব্যাপী দাওয়াত ও ধর্মীয় শিক্ষা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। আরেকটি বিশেষ দিক হল—নারী তলাবাদের জন্য আলাদা ও সুসংগঠিত শিক্ষা ব্যবস্থা। হাজার হাজার শিক্ষিত নারী বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন, যা হাওযার ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এছাড়াও আজকাল মেধাবী ও উৎসাহী শিক্ষার্থীরা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে হাওযায় প্রবেশ করছে, যা অতীতে খুব একটা দেখা যেত না। আমিও এবং আমার ভাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে আহলে বাইতের (আ.) জ্ঞানের পথে এসেছি।

লখনউ হাওযার বৈজ্ঞানিক অবস্থান পুনরুদ্ধারে আপনার প্রস্তাব কী?
সৈয়দ কালবে জাওয়াদ নকভী: শিয়া শাসনামলে ভারতে ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা সরাসরি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলত। কিন্তু এখন অনেক মাদরাসা ন্যূনতম চাহিদা, যেমন খাবার ও তলাবাদের বেতন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। আমি পরামর্শ দিই, মানুষ যেমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে অর্থ ব্যয় করে, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসুক। এই সমর্থনের মাধ্যমেই লখনউ হাওযা আবার তার গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি শিয়া সমাজের উদ্দেশ্যে কী পরামর্শ দেবেন?
সৈয়দ কালবে জাওয়াদ নকভী: আমি ধৈর্য, সংযম ও আইনের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখার পরামর্শ দেব। শত্রুরা আমাদের এমন প্রতিক্রিয়ায় উস্কে দিতে চায়, যা তাদের হাতে আমাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অজুহাত তুলে দেয়। আমাদের উচিত মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের পথ অনুসরণ করে, শান্তিপূর্ণভাবে সংস্কৃতি ও সমাজের লড়াই চালিয়ে যাওয়া।

নিঃসন্দেহে কোম হাওযার অগ্রগতির অন্যতম কারণ হল বেগম ফাতিমা মাসুমা (সা.)-এর উপস্থিতি এবং তাঁর আধ্যাত্মিক অনুগ্রহ। আমি আশা করি এই পবিত্র হাওযা সর্বদা জ্ঞানের আলো, পথনির্দেশ এবং আহলে বাইতের (আ.) শিক্ষার বিশ্বব্যাপী প্রচারের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha