হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের হাওজায়ে ইলমিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন কাসেম খানজানি “ইমাম রেজা (আ.)-এর বিতর্ক পদ্ধতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিতর্কের শিল্প” শীর্ষক একটি ইলমি সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, যা হাওজা গবেষণা ও সংশয় নিরসন কেন্দ্রের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ইমাম রেজা (আ.)-এর বিতর্ক পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু উভয় দিক থেকেই যুগে যুগে বিভিন্ন সংশয়ের সমাধানের জন্য প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করেন।
মামুনের উদ্দেশ্য ও ইমাম রেজা (আ.)-এর কৌশল
খানজানি বলেন, মামুনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইমাম রেজা (আ.)-কে মদীনার পরিবর্তে মরব (খোরাসানের রাজধানী) এনে নিয়ন্ত্রণে রাখা। প্রথমে তিনি ইমামকে খিলাফতের প্রস্তাব দেন, যা ছিল সম্পূর্ণ কৌশলগত ও প্রতারণামূলক। ইমাম (আ.) এটি প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ তিনি জানতেন এটি একটি ধোঁকা।
ইমাম রেজা (আ.) কেন ওয়ালীয়ে-আহদ (উত্তরাধিকারী) পদ গ্রহণ করেছিলেন?
খানজানি ব্যাখ্যা করেন, মামুন কূটকৌশলে ইমামকে হুমকি দিয়েছিলেন, তাই ইমাম (আ.) বাধ্য হয়ে মার্ভ সফর করেন। মামুন ওয়ালীয়প-আহদ হওয়ার প্রস্তাব দিলে ইমাম শর্তারোপ করেন:
- সরকারি নিয়োগ-বরখাস্তে হস্তক্ষেপ না করা
- রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত না হওয়া
এতে মামুনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়, এবং তিনি ইমামের মর্যাদা খর্ব করতে বৈজ্ঞানিক বিতর্কের আয়োজন করেন।
মামুনের গোপন লক্ষ্য:
১. ইমামের ভাবমূর্তি নষ্ট করা (যেমন: সুলাইমান মারওয়াজির সাথে বিতর্কে তাকে ইমামকে দুর্বল দেখানোর নির্দেশ দেন)।
২. জনগণকে রাজনৈতিক সমস্যা থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা (মামুন ও আমিনের মধ্যে গৃহযুদ্ধের সময় জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া)।
৩. ইমামের জ্ঞান পরীক্ষা করা (তিনি কি সত্যিই অতুলনীয় পণ্ডিত?)
ইমাম রেজা (আ.)-এর বিতর্ক পদ্ধতি:
১. প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতি: ইমাম (আ.) প্রথমে প্রতিপক্ষকে প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করতেন, তারপর যুক্তিসঙ্গত উত্তর দিতেন।
২. যুক্তি ও প্রজ্ঞার ব্যবহার: তিনি ধর্মগ্রন্থের পরিবর্তে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ দিয়ে সংশয় দূর করতেন।
৩. প্রতিপক্ষের বিশ্বাসকে সম্মান করা: যেমন—খ্রিস্টান পাদ্রি জাসলিককে জিজ্ঞাসা করেন, “ঈসা (আ.) যদি ঈশ্বর হতেন, তাহলে তিনি কাকে ইবাদত করতেন?”
৪. ব্যক্তিগত আক্রমণ এড়ানো: তিনি কখনও ব্যক্তিকে আক্রমণ করতেন না, বরং তার যুক্তি খণ্ডন করতেন।
ফলাফল:
ইমামের বিতর্ক দক্ষতা মামুনের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেয় এবং ইমামের জ্ঞান ও ন্যায়পরায়ণতা মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যায়। শেষ পর্যন্ত, মামুন ঈর্ষান্বিত হয়ে ইমাম (আ.)-কে বিষপ্রয়োগে শাহাদাত বরণ করান।
শিক্ষা:
- বিতর্কে যুক্তি, ধৈর্য ও নৈতিকতা বজায় রাখা।
- সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো, এমনকি শত্রুর মঞ্চেও।
- ইমাম রেজা (আ.)-এর জীবনী থেকে আধুনিক যুগের সংলাপ ও বিতর্কে অনুপ্রেরণা নেওয়া।
আপনার কমেন্ট