শুক্রবার ৯ মে ২০২৫ - ১৪:৫৮
ইমাম রেজা (আ.)-এর দৃষ্টিতে ‘যুব সমাজের প্রতিপালন পদ্ধতি’

নামায ও ভালোবাসা প্রকাশ—এ দুটি যুবকদের আধ্যাত্মিক ও আবেগিক তারবিয়াতের (প্রতিপালন) মূল স্তম্ভ। নামায হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও প্রশান্তির সেতু, আর ভালোবাসা হলো মানবিক বন্ধন শক্তিশালী করার একটি কার্যকর মাধ্যম—যা ইমাম রেজা (আ.)-এর বাণী ও জীবনাদর্শে বিশেষ স্থান পেয়েছে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইমাম রেজা (আ.)-এর নির্দেশনার আলোকে যুব প্রজন্মের তারবিয়াতের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হুজ্জাতুল ইসলাম আব্দুল করিম তাবরিজীর লেখনীতে প্রকাশিত হয়েছে। 

ভূমিকা
যুব প্রজন্মের সঠিক তারবিয়াত সমাজের জন্য অপরিহার্য। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাময় প্রজন্মের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সমাজের সৌভাগ্য ও সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। নিম্নে ইমাম রেজা (আ.)-এর নির্দেশনায় যুব তরবিয়তের কয়েকটি মূলনীতি উপস্থাপন করা হলো: 

১. সম্মান প্রদর্শন
যুবকদের জন্য সম্মান একটি মৌলিক চাহিদা। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন,

 “মানুষের প্রতি সদয় আচরণ করা অর্ধেক বুদ্ধিমত্তা।” 

যুবকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, তাদের সাথে পরামর্শ করা, সালাম দেওয়া, উপহার দেওয়া বা তাদের ভালো কাজের প্রশংসা করা—এগুলো সম্মান ও ভালোবাসার প্রকাশ। ইমাম (আ.) আরও বলেন, 

“ছোট-বড় সবার সাথে সুন্দরভাবে আচরণ করো।” 

সহনশীলতা, ধৈর্য ও ভুল ক্ষমা করা যুবকদের হৃদয়ে ভালোবাসা বাড়ায়। 

২. যুবকদের কথা শোনা
ইবরাহিম ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন,

“ইমাম রেজা (আ.) কখনও কারো কথা বাধা দিতেন না, বরং ধৈর্য ধরে শুনতেন এবং যার যা প্রয়োজন, তা পূরণ করতেন।” 

পরিবারে যুবকদের কথা শুনলে তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। 

৩. কুরআনের সাথে সম্পর্ক
কুরআনিক শিক্ষা যুবকদেরকে নৈতিক, চিন্তাশীল ও সমাজসেবী হিসেবে গড়ে তোলে। ইমাম রেজা (আ.) নিজে প্রতি তিন দিনে কুরআন খতম করতেন এবং প্রতিটি আয়াতের অর্থ ও প্রেক্ষাপট নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। 

ফযীল ইবনে ইয়াযের ঘটনা:
তিনি এক সময় ডাকাত ছিলেন, কিন্তু এক রাতে কুরআনের আয়াত “আলাম ইয়া'নি লিল্লাযীনা আমানু...” শুনে হৃদয় পরিবর্তন করেন এবং পরবর্তীতে একজন মহান সাধকে পরিণত হন। 

৪. নৈতিক গুণাবলির চর্চা
ইমাম রেজা (আ.)-এর জীবন থেকে কিছু নৈতিক শিক্ষা: 

- অন্যদের সাহায্য করা: এক ব্যক্তি ইমামকে চিনতে না পেরে নিজের গায়ে মালিশ করতে বললে, ইমাম তা করতে থাকেন। 

- সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ: ইমাম (আ.) অপচয় রোধ করে বলতেন, “অন্যের প্রয়োজনে দান করো।” 

- বিনয়: ইমাম (আ.) সকলকে একত্রে খাবার খাওয়াতেন এবং বলতেন, “আল্লাহ এক, সবার মা-বাবা এক, পার্থক্য শুধু আমলের মধ্যে।”

- অহংকার ত্যাগ: ইমাম (আ.) তার ভাই জাইদকে সতর্ক করে বলেছিলেন, “শুধু বংশগত মর্যাদা নয়, আমলই মূল বিষয়।”

৫. হালাল রুজি অর্জন
ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন,

“যে ব্যক্তি আল্লাহর রহমতে পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য পরিশ্রম করে, তার সওয়াব মুজাহিদের চেয়েও বেশি।”

তিনি আরও বলেন,

“পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত রুজির ব্যবস্থা করো, যাতে তারা তোমার মৃত্যু কামনা না করে।” 

৬. বিবাহের গুরুত্ব

ইমাম রেজা (আ.) বিবাহকে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেন, 

“সৎ স্ত্রীর চেয়ে বড় কোনো লাভ নেই, যে তোমাকে দেখলে খুশি করে এবং অনুপস্থিতিতে তোমার সম্মান ও সম্পদ রক্ষা করে।”

তিনি খারাপ চরিত্রের লোকের সাথে বিবাহ না করতে সতর্ক করেন। 

৭. নামাযের তাৎপর্য
নামায হলো আল্লাহর সাথে সংযোগের মাধ্যম। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন,

“নামায মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়।”

তিনি নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করতে উৎসাহিত করতেন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দিতেন। 

ইবনে সিনার ঘটনা:
তিনি যখন কোনো সমস্যায় পড়তেন, মসজিদে গিয়ে নামায পড়তেন এবং সমস্যার সমাধান পেতেন। 

৮. ভালোবাসা প্রকাশ
মাওলানা রুমি বলেন,

> “ভালোবাসায় তিক্ততাও মিষ্টি হয়, ভালোবাসায় তামাও সোনা হয়ে যায়।”

ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন,

“কাউকে ভালোবাসলে তা তাকে জানাও, এতে বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়।”

ইমাম রেজা (আ.) তার সন্তানকে বলতেন,

 “হে পুত্র! আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য উৎসর্গিত, তুমি ইমামতের যোগ্য।”

মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও তিনি সন্তানকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিলেন। 

পরিশেষ, ইমাম রেজা (আ.)-এর শিক্ষা হলো—যুবকদের সম্মান দেওয়া, তাদের সাথে সদাচরণ করা, কুরআন ও নামাযের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমে তাদের সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠন করা। 

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha