হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন সাফায়ী বুশেহরি বলেন, মাসুমিন (আ.) তাঁদের কিছু ঘনিষ্ঠ ও মহামানবকে “আমার দেহের (অস্তিত্বের) অংশ” হিসেবে অভিহিত করেছেন: প্রথমত হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.) এবং দ্বিতীয়ত ইমাম রেজা (আ.)। ইমাম সাদিক (আ.) বলেন, “আমার দেহের অংশ শিগগিরই খোরাসানের ভূমিতে দাফন করা হবে, আর আল্লাহ তার জিয়ারতকারীর হৃদয় থেকে দুঃখ দূর করবেন এবং তাঁর গোনাহ ক্ষমা করবেন।”
তিনি ইমাম রেজা (আ.)-এর ইমামতির সময়কালকে ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম কঠিন সময় হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ইমাম (আ.) অত্যন্ত বিপদসংকুল পরিবেশে ইসলাম ও আহলে বাইতের শিক্ষা রক্ষা এবং উন্নয়ন করেন।
বুশেহরের ইমামে জুমা বলেন, ইমাম রেজা (আ.)-এর সময়কাল ছিল তিনটি বিপজ্জনক ও সংকটপূর্ণ প্রবণতার সম্মুখীন: প্রথমত ছিল দারুল খিলাফা, যেখানে জবরদখল, অপবিত্রতা ও ইসলামী আদর্শবিরোধী সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ছিল।
তিনি বলেন, একজন কবি বলেছিলেন: “আমরা বনী উমাইয়ার জুলুমকে বনী আব্বাসের কথিত ন্যায়ের চেয়ে শ্রেয় মনে করি।” হারুনের শাসনামলে দুর্বৃত্তদের রাষ্ট্রীয় সম্পদে প্রবেশাধিকার ছিল, অথচ মুমিনরা মদিনায় চরম দারিদ্র্যে দিনাতিপাত করত। ইমাম কাযিম (আ.) একাধিকবার কারাবন্দি হন, আর তাঁর সাথীরা জীবন রক্ষায় বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েন। বনী আব্বাসের খলিফারা একে একে ইমামদের বিষ প্রয়োগে শহীদ করে।
তিনি বলেন, ইমাম রেজা (আ.)-এর জীবন ছিল অব্যাহত নজরদারির আওতায়। যদি সরকার তাঁকে হুমকি মনে করত, তবে তাঁকে হত্যা করত। ইমাম কাযিম (আ.)-এর শাহাদত খলিফাদের আতঙ্কিত করেছিল: তারা ভয় পেত, যদি এমন ঘটনা আবার ঘটে, তবে শিয়ারা বিদ্রোহ করবে।
দ্বিতীয় প্রবণতা ছিল সাংস্কৃতিক আক্রমণ, যা আহলে বাইতের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছিল: এর মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ আলেমদের ব্যবহার করে মাকতাবে আহলে বাইতের বিরোধিতা এবং বিদেশ থেকে ব্যক্তিদের এনে ইসলামবিরোধী গ্রন্থ অনুবাদ ও বিতর্ক আয়োজন।
তৃতীয় বিপজ্জনক প্রবণতা ছিল শিয়া মতবাদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি: যেমন ওয়াকফিয়া, ফাতহিয়া প্রভৃতি বিভ্রান্ত গোষ্ঠী যারা ইমামতের ধারাকে আক্রমণ করে ইসলামী ও আহলে বাইতির সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।
তিনি বলেন, মামুন ছিল বনী আব্বাসের অন্যতম চতুর খলিফা: সে বুঝতে পেরেছিল ইমাম রেজা (আ.)-এর প্রতি ইসলামি আন্দোলনগুলোর শ্রদ্ধা রয়েছে এবং ইমাম মদিনায় জনগণের নিকট সুপ্রিয়। তাই সে ইমামকে মার্ভে এনে, তাঁকে ওয়ালিয়ে আহদ নিযুক্ত করে, তাঁর মর্যাদা ভাঙতে এবং ইসলামি আন্দোলনগুলোকে ইমামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল।
হুজ্জাতুল ইসলাম সাফায়ী বুশেহরি বলেন, ইমাম রেজা (আ.) আল্লাহর অনুগ্রহে অসাধারণ কাজ সম্পন্ন করেন: মার্ভে যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে ভাষণ দেন, মানুষের হিদায়াত করেন এবং নিশাপুরে বিখ্যাত “সিলসিলাতুয্-যাহব” হাদীস বলেন,
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” একটি শক্ত দুর্গ, এতে প্রবেশকারী আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকে, তবে শর্ত হলো — সেই দুর্গে প্রবেশের শর্তগুলোর একটি হলো আমার (ইমাম রেজা) বেলায়েত গ্রহণ।
শেষে তিনি বলেন, ইমাম রেজা (আ.) মামুনের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেন। তিনি ইসলাম ও আহলে বাইতের শিক্ষাকে এমনভাবে সংরক্ষণ করেন যে, তাঁর পর থেকে ইসলাম বিকৃত বা বিভ্রান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, হযরত মাসুমা (সা.আ.) ইমাম রেজা (আ.)-কে সহায়তা করতে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেন: আমি এই যাত্রাকে ‘ওলাইয়ি হিজরত’ বলি, যার ফলস্বরূপ তিনি শহীদ হন এবং পবিত্র কোম নগরীতে দাফন হন।
আপনার কমেন্ট