হাওজা নিউজ এজেন্সি, মাশহাদ প্রতিনিধি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আহমাদ মারভি ইরাকের সামারা শহরের একদল মুকেব (বিনামূল্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ স্টল) পরিচালকের সাথে আস্তানে কুদসে রাজাভীর ‘বেলায়েত’ হলে বৈঠকে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মাসুম ইমামগণের (আ.) খেদমত করা এক মহান সৌভাগ্য, যার প্রকৃত মূল্য কিয়ামতের দিন প্রকাশিত হবে। তিনি বলেন, আহলে বাইত (আ.)-এর খেদমত একটি ব্যাপক ধারণা, যা কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা ভূগোলের সীমায় আবদ্ধ নয়। যে কোনো ব্যক্তি খাঁটি নিয়তে ইমামগণের (আ.) সন্তুষ্টির জন্য কল্যাণের পথে পদক্ষেপ নিলে, সে তাদের খাদেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
তিনি বলেন, খেদমত শুধু পবিত্র স্থানগুলিতে বিশেষ পোশাক পরিধান করে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মাসুম ইমামগণের (আ.) নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যে কোনো কল্যাণমূলক কাজই তাদের খেদমতের অন্তর্ভুক্ত।
‘আরেফান বিহাক্বিহ’ জিয়ারত: আধ্যাত্মিক সুফি লাভের শর্ত
আস্তানে কুদসে রাজাভীর প্রধান উপাধ্যক্ষ আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি জ্ঞানের উন্নয়নের গুরুত্ব ও তা ব্যক্তি ও সমাজের জীবনে প্রভাবের ওপর আলোকপাত করে বলেন, মাসুম ইমামগণের (আ.) জীবনী অধ্যয়ন ও জানা সকল শিয়া মুসলমানের কর্তব্য। শিয়াদের উচিত নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি জ্ঞান ও পরিচিতি বৃদ্ধি করা।
তিনি বলেন, জিয়ারতের ফজিলত সংক্রান্ত হাদীসে ‘আরেফান বিহাক্বিহ’ শব্দগুচ্ছ বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, যা আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি জ্ঞানের বিশেষ মর্যাদা নির্দেশ করে। এই হাদীসে ‘আরেফান বিহাক্বিহ’কে জিয়ারতের আধ্যাত্মিক সুফি লাভের প্রধান শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং আহলে বাইত (আ.)-এর সঠিক ও গভীর জ্ঞানের গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি জ্ঞান তিনটি অক্ষরে গঠিত হতে হবে:
১. ‘আরশী মর্যাদা’র জ্ঞান,
২. তাদের আদব, শিক্ষা, জীবনধারা ও সংগ্রামী চরিত্রের অনুসরণ,
৩. তাদের সংগ্রামী জীবনাদর্শ।
তিনি বলেন, আহলে বাইত (আ.) সাধারণ মানুষ নন, বরং তারা আল্লাহর সর্বোত্তম বান্দা ও তাঁর নিকটতম ব্যক্তি।
আহলে বাইত (আ.): ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের ব্যবহারিক আদর্শ
তিনি বলেন, দ্বিতীয় অক্ষর হলো আহলে বাইত (আ.)-এর আদব, শিক্ষা, জীবনধারা ও নৈতিকতার অনুসরণ। এই বৈশিষ্ট্যগুলো শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানের জন্য যথেষ্ট নয়, বরং তা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আহলে বাইত (আ.)-এর জীবনাদর্শ আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক আচরণের জন্য পূর্ণাঙ্গ মানবিক ও ইসলামী আদর্শ হিসেবে কাজ করবে। আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা শুধু আবেগী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা প্রতিজ্ঞা, কর্ম ও স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার দিকে পরিচালিত করবে, বিশেষত অত্যাচার ও জুলুমের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে।
আমেরিকা: ঔদ্ধত্য ও আধিপত্যবাদের প্রকৃষ্ট উদাহরণ
তিনি বলেন, আজকের বিশ্বে আমেরিকা আধিপত্যবাদী, শোষণমূলক ও অমানবিক নীতির মাধ্যমে বৈশ্বিক ঔদ্ধত্যের অন্যতম উদাহরণ। পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ কর।’
তিনি বলেন, ইসরাইল আজ স্পষ্ট জুলুম ও নিষ্ঠুরতার প্রতীক, যা আমেরিকার সরাসরি সমর্থনে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত করছে। গাজার লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ, পানি, খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার মতো অপরাধ ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, আমেরিকার সমর্থন ছাড়া ইসরাইল একদিনও টিকে থাকতে পারবে না। তাই, এই সমর্থনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মুসলমানদের ধর্মীয় দায়িত্ব।
ইরান-ইরাক ঐক্য: ঔদ্ধত্যের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করার হাতিয়ার
তিনি বলেন, শত্রুরা চায় না ইরান ও ইরাকের মতো দুটি বৃহৎ জাতির মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠিত হোক। ইরাকের জনগণের ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা এই সত্যের সাক্ষ্য দেয়। আমেরিকা কখনোই ইরাকের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করেনি, বরং তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসলামী উম্মাহর ঐক্য, বিশেষত ইরান ও ইরাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলিতে, বৈশ্বিক ঔদ্ধত্যের আধিপত্যবাদী লক্ষ্যগুলো ব্যর্থ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আপনার কমেন্ট