হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.) জ্ঞান ও বিদ্যার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং একটি মহান জ্ঞানচর্চার আন্দোলনের সূচনা করেন; তাঁর জ্ঞানের অবস্থান কী ছিল এবং তা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য কী উপযোগিতা বহন করত?
এই প্রশ্নের উত্তরে সুন্নি বিশ্বের বিখ্যাত আলেম মুহাম্মদ আবু জোহরা-এর কথাগুলি উল্লেখ করা যথার্থ হবে। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "আল-ইমাম আস-সাদিক (আ.)"-এ ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.) সম্পর্কে বলেন:
> "و کان ابنه محمد الباقر وریثه فی امامه العلم، و نبل الهدایه، ولذا کان مقصد العلماء من کل البلاد الاسلامیه، و ما زار أحد المدینه الا عرج علی بیت محمد الباقر یاخذ عنه"
“ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.) ছিলেন ইমামতপূর্ণ জ্ঞানের উত্তরাধিকারী এবং হেদায়েতের বিশিষ্ট পথপ্রদর্শক। এজন্য তিনি সমস্ত ইসলামি দেশগুলোর জ্ঞানপিপাসু আলেমদের গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছিলেন। কেউই মদিনা সফর করত না, যে ইমাম বাকরের (আ.) বাড়িতে না যেত এবং তাঁর কাছ থেকে উপকৃত না হত।”
আবু জোহরা আরও বলেন:
> "و کان یقصده من أئمة الفقه و الحدیث کثیرون، منهم سفیان الثوری، و سفیان بن عیینة محدث مکة، و منهم أبو حنیفه فقیه العراق"
“ফিকহ ও হাদীসের বহু ইমাম, যেমন সুফিয়ান সাওরি, মক্কার মুহাদ্দিস সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা এবং ইরাকের প্রখ্যাত ফকীহ আবু হানিফা (সুন্নি চার মাজহাবের একজন ইমাম), ইমাম বাকের (আ.)-এর নিকট থেকে উপকৃত হয়েছেন।”
অর্থাৎ, ইমাম বাকের (আ.)-এর জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র শুধু শিয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং সমস্ত মুসলিম সমাজের জন্য তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।
ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.)-এর শাহাদাত কীভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিন
শাহাদাতের পূর্বে ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.) তাঁর পুত্র ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে একটি বিশেষ ওসিয়ত করেন। তিনি বলেন, হজের সময় মিনা-তে ১০ বছর পর্যন্ত তাঁর জন্য শোকানুষ্ঠান বা মাতম পরিচালনা করা হোক এবং এই উদ্দেশ্যে কিছু সম্পদ নির্ধারণ করে দেন যাতে মাতমকারীগণ তাঁদের কাজ করতে পারেন।
এই হাদীসটি “আল-কাফি” থেকে এসেছে, যার বর্ণনা নিম্নরূপ:
> "قال لی أبی: یا جعفر، أوقِفْ لی مِنْ مَالی کَذَا وَ کَذَا لِنَوَادِبَ تَنْدُبُنِی عَشْرَ سِنِینَ بِمِنًی أَیَّامَ مِنًی"
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন: আমার পিতা আমাকে বললেন— হে জাফর, আমার সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট কিছু অর্থ রেখে দাও যেন মাতমকারীরা হজের সময় মিনায় দশ বছর ধরে আমার জন্য শোকানুষ্ঠান পরিচালনা করে।
— (আল-কাফি, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১৭, হাদীস ১)
এই ওসিয়ত-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আহলুল বাইতের পরিচয় প্রচার করা, তাদের জ্ঞানের আলো সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া, এবং মানুষকে প্রকৃত ইসলামের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করানো।
এটি আমাদের জন্য আজও একটি দিকনির্দেশনা যে, কেন আমরা আহলুল বাইতের ইমামদের জন্ম ও শাহাদাতের দিনে শোকসভা, মজলিস ও ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে থাকি।
শাহাদাত:
ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.) অবশেষে বহু দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার পর, কারবালার ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হওয়ার পর, ১১৪ বা ১১৭ হিজরিতে (বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী), উমাইয়া খলীফা হিশামের ভাইপো ইব্রাহিম ইবনে ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালিক-এর দ্বারা বিষপ্রয়োগে শহীদ হন।
তিনি মদিনায় শহীদ হন এবং বাকী কবরস্থানে তাঁর পবিত্র দাফন সম্পন্ন হয়।
সারসংক্ষেপ:
ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.)-এর জ্ঞানচর্চা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পুনরুত্থান ছিল এমন এক ঐতিহাসিক কাজ, যার ফলেই পরবর্তী ইমামগণ বিশেষত ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর যুগে শিয়া চিন্তাধারার পূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয়। তাঁর শাহাদাত ছিল সত্য ও হকপন্থার বিরুদ্ধে জালিমদের প্রতিহিংসার প্রকাশ।
আপনার কমেন্ট