হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম সাইয়্যেদ আলিরেজা তোরাশিয়ুন “সদাচার: পরিবারের শান্তির ভিত্তি” শীর্ষক এক বক্তৃতায় বলেন, “পরিবারের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করতে আমাদেরকে কিছু মৌলিক নীতির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। প্রশ্ন হলো, কীভাবে সময়ের সাথে সাথে পরিবারকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়?”
ইসলামী শিক্ষায় পরিবার ও গৃহের জন্য কিছু বিশেষ গুণের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো চর্চার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন মজবুত হয়। সময়ের সাথে সাথে এসব গুণের অনুশীলন পরিবারের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে।
সদাচার: পরিবারের আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও আবেগিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যম
একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো ‘সদাচার’। স্বামী-স্ত্রী যদি তাদের দাম্পত্য জীবনে সদাচার বজায় রাখেন, তবে সময়ের সাথে সাথে পরিবারের আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও আবেগিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সদাচারের বৈশিষ্ট্যগুলো কী?
ইসলামী হাদীসে সদাচারের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে:
প্রথমত, ‘ভালো কাজের জবাবে ভালো কাজ করা’। এটি সদাচারের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। স্বামী-স্ত্রীর উচিত একে অপরের আচরণ সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা। যদি দেখা যায় যে সঙ্গী ভালো আচরণ করছে, তবে অনুরূপ ভালো আচরণের মাধ্যমে তার জবাব দেওয়া উচিত।
এটি ডমিনো ইফেক্টের মতো কাজ করে - সময়ের সাথে সাথে পরিবারে ভালো আচরণ বৃদ্ধি পায়।
ইমাম আলী (আ.) মালিক আল-আশতারকে বলেছিলেন, “ভালো আচরণ দেখো, যাতে ভালো কাজ বৃদ্ধি পায়।” এটি দাম্পত্য জীবনে ভালো আচরণ পর্যবেক্ষণ ও লালনের গুরুত্ব তুলে ধরে।
ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দাম্পত্য জীবনের শিল্প
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সঙ্গীর ভুল আচরণের জবাবে খারাপ আচরণ না করে সহনশীলতা দেখানো। ‘খারাপ আচরণ উপেক্ষা করা’ বা ‘সহনশীলতা দেখানো’ এর পুনরাবৃত্তি রোধ করে। কারণ খারাপ আচরণের জবাব খারাপ আচরণে দিলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পায় এবং পারিবারিক পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
একটি উদাহরণ দেওয়া যাক: এক ব্যক্তি গাড়ি দুর্ঘটনার পর রাগান্বিত চালকের সাথে হাসিমুখে ও ধৈর্য্যের সাথে আচরণ করায় চালক ক্ষমা চেয়েছিলেন। এটি প্রমাণ করে যে ‘ভালো আচরণ ও সহনশীলতা’ কীভাবে রাগ ও উত্তেজনা কমাতে পারে।
ধৈর্য্য: দাম্পত্য জীবনের অপরিহার্য গুণ
ধৈর্য্য এমন একটি নৈতিক গুণ যা ছাড়া দাম্পত্য জীবন সমস্যায় পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর চারিত্রিক ও আচরণগত পার্থক্য ধৈর্য্যের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে। যদি উভয় পক্ষ ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সাথে একে অপরের পার্থক্য মেনে নেয় এবং অপ্রয়োজনীয় বিবাদ এড়িয়ে চলে, তবে দাম্পত্য জীবন শান্তি ও সুখের দিকে এগিয়ে যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসমূহ:
১. পরিবারের স্থায়ীত্বের মূল চাবিকাঠি হলো ‘সদাচার’
২. ‘ভালো আচরণের জবাবে ভালো আচরণ’ পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করে
৩. ‘ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া’ উত্তেজনা কমায়
৪. ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী ধৈর্য্যের জন্য রয়েছে মহান প্রতিদান
৫. সঙ্গীর ভুলত্রুটি ‘ক্ষমার দৃষ্টিতে’ দেখা উচিত
৬. ‘কঠোরতা নয়, নমনীয়তাই’ পারিবারিক শান্তি বজায় রাখে
আপনার কমেন্ট