বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫ - ১৮:০৫
আল্লাহ্‌ হযরত আলী (আ.)-কে মনোনয়ন দিয়ে নিজের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন

হযরত আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি বলেছেন, ইমাম আলী (আ.)-কে মনোনয়ন করার মাধ্যমে নবুওত বন্ধ হয়নি বা অসম্পূর্ণ থাকেনি; বরং তা তার পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গেছে। আল্লাহ্‌ যখন আলী (আ.)-কে মুসলমানদের খলিফা হিসেবে মনোনীত করলেন—যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পর সবচেয়ে শক্তিশালী, জ্ঞানী ও বিজ্ঞ মুসলিম—তখন তিনি নিজের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করলেন।

হাওযা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হযরত আয়াতুল্লাহ মাকারিম শিরাজি তাঁর এক লেখায় গাদীরের আয়াতসমূহ—বিশেষ করে "আয়াত-ই একমালে দ্বীন" বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন:

بسم الله الرحمن الرحیم

আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-এর সরাসরি নেতৃত্ব ও খিলাফত প্রমাণকারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়াতগুলোর মধ্যে গাদীর দিবসে নাজিল হওয়া আয়াতগুলো অন্যতম। যেমন—আয়াতুল বালাগ বা আয়াতুল তাবলিগ এবং আয়াতুল একমালে দ্বীন। এসব আয়াতের তাৎপর্য নতুনভাবে চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। দীর্ঘতা ও পাঠকের ধৈর্যের কথা বিবেচনায় রেখে আমরা পূর্বে পৃথক একটি প্রবন্ধে "আয়াতুল তাবলিগ" নিয়ে আলোচনা করেছি। এবার এই আলোচনায় "আয়াতুল একমালে দ্বীন" নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করা যায়, এই কাজ আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও তাঁর ন্যায্য উত্তরাধিকারীর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক হবে।

আয়াত একমালে দ্বীন:

আল্লাহ্‌ সূরা মায়েদার ৩য় আয়াতে বলেন:

"الْیَوْمَ یَئِسَ الَّذِینَ كَفَرُوا مِنْ دِینِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ ۚ الْیَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِینَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَیْكُمْ نِعْمَتِی وَرَضِیتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِینًا..."

অর্থাৎ:
আজ কাফিররা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে গেছে; অতএব, তাদেরকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো! আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং আমার নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য চিরস্থায়ী দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।

আলোচনার প্রেক্ষাপট:

এই আয়াতে এমন এক মহান ও গৌরবোজ্জ্বল দিনের কথা বলা হয়েছে যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মোড় ঘোরানো দিন ছিল। এটি এমন এক দিন, যার বার্তা ছিল:

শত্রুর হতাশা,

দ্বীনের পূর্ণতা,

আল্লাহর নিয়ামতের পরিপূর্ণতা,

এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি।

আসলে এই দিনটি কী ছিল?

ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ:

দ্বীনের পূর্ণতা ও নিয়ামতের সমাপ্তি

"الْیَوْمَ یَئِسَ الَّذِینَ كَفَرُوا مِنْ دِینِكُمْ"

ইসলামের শত্রু ও কাফেররা শুরু থেকেই ইসলাম ধ্বংসের চেষ্টা করেছে। তবে প্রত্যেক ধাপে ব্যর্থ হয়ে ভবিষ্যতের আশায় ছিল। কিন্তু এই আয়াত নাজিলের সময় এমন এক ঘটনা ঘটল, যার ফলে কেবল তাদের চলতি পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়নি, বরং ভবিষ্যতের আশা-ভরসাও শেষ হয়ে গেছে।

"فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ"

এই মহান বিজয়ের দিন মুসলমানরা শত্রুদের ভয় না করে একমাত্র আল্লাহকে ভয় করবে। কারণ এখন মূল হুমকি বাইরের নয়, বরং আত্মিক দুর্বলতা, প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং আল্লাহর হুকুম অমান্য করা।

"الْیَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِینَكُمْ..."

এই গৌরবোজ্জ্বল দিনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে দ্বীন পরিপূর্ণ হলো এবং আল্লাহর নিয়ামত পূর্ণতা লাভ করল।

"وَرَضِیتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِینًا"

আজকের দিনের গুরুত্ব এত বেশি যে, আল্লাহ ইসলামকে মানুষের চিরন্তন ধর্ম হিসেবে মেনে নিয়েছেন।

এই দিনটি কী দিন ছিল?

এই আয়াত চারটি বৈশিষ্ট্য যুক্ত এক দিনের কথা বলছে:

১. কাফেররা হতাশ হয়,
২. দ্বীন পূর্ণ হয়,
৩. নিয়ামত পরিপূর্ণ হয়,
৪. ইসলাম চিরন্তন ধর্ম হিসেবে গৃহীত হয়।

এই চার বৈশিষ্ট্য সম্বলিত দিনটি গাদীর খুমের দিন ব্যতীত আর কোনো দিন হতে পারে না।

উপসংহার:

এই আয়াতের গভীরতা ও তাৎপর্য উপলব্ধি করতে দুটি পথ রয়েছে:

১. আয়াতের বক্তব্য নিজে বিশ্লেষণ করে উপলব্ধি করা, বাইরের উৎস ব্যতিরেকে।
২. আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীস ও মুফাসসিরদের মতামত দ্বারা ব্যাখ্যা করা।

উভয় পথেই স্পষ্ট হয়: গাদীরের দিনই সেই মহান দিন, যেদিন আল্লাহ ইমাম আলী (আ.)-কে মনোনীত করে দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেন।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha