বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫ - ১৮:৫৯
ইসলামী উম্মাহর একমাত্র মুক্তির পথ— আহলুল বায়তের (আ.) নেতৃত্বকে আঁকড়ে ধরা

লেবাননের “তাজামুউ উলামায়ে মুসলেমিন” (মুসলিম উলামা সোসাইটি)-এর ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান শেখ গাজি হানিনেহ বলেছেন, “ইসলামী উম্মাহর একমাত্র মুক্তির পথ হলো আহলুল বায়েত (আ.)-এর নেতৃত্ব মেনে চলা।” তিনি বলেন, প্রতিরোধের ধারা (রেজিস্ট্যান্স) হচ্ছে গাদীরের পথ ও আমিরুল মু’মিনীন (আ.)-এর নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা, যা বিশ্বব্যাপী জুলুম ও ঔদ্ধত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: তিনি বৃহস্পতিবার (২২ জুন)  ইরানের মাশহাদের নূর হল-এ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন “গাদীর ও প্রতিরোধ”-এ এসব কথা বলেন।

গাদীর: ইসলামী উম্মাহর নেতৃত্ব, ঐক্য ও সম্মানের দিন
তিনি বলেন, “গাদীর কেবল শিয়াদের নয়, এটি একটি মহান ইসলামি দিন এবং সমগ্র উম্মাহর জন্য। রাসূল (সা.) এই দিনে আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি ও নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে উম্মাহর পথনির্দেশনা নিশ্চিত করেন।” তিনি উল্লেখ করেন, দ্বিতীয় খলিফাও এই দিনটিকে “ঈদের দিন” বলে অভিহিত করেছিলেন এবং এটিকে উম্মাহর সম্মানের প্রতীক বলেছেন।

আহলে বাইত (আ.)-এর নেতৃত্ব: ধর্মীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে
তিনি বলেন, “আমীরুল মু’মিনীন (আ.)-এর নেতৃত্ব কেবল একটি মাজহাব বা মতবাদের বিষয় নয়। আহলে বাইতকে ভালোবাসা সমস্ত সুন্নি মাজহাবেই স্বীকৃত।” তিনি আহমদ ইবনে হানবালের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আলী জান্নাত ও জাহান্নামের বণ্টনকারী।’” এ থেকে প্রমাণিত হয়, আলী (আ.)-এর প্রতি ভালবাসাই ঈমান ও নেফাকের (মুনাফিকির) মানদণ্ড।

আহলে বাইত: জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্র
শেখ হানিনেহ বলেন, “আহলে বাইতের পথ মানেই হলো জুলুম ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। যদি কেউ ধর্মীয় বেশে থাকেও, কিন্তু জুলুমের পক্ষে অবস্থান নেয়, সে আহলে বাইতের পথ থেকে বিচ্যুত।” তিনি বলেন, “আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা মানে বাস্তবে প্রতিরোধের ফ্রন্টকে সমর্থন করা।”

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইমাম খোমেনীর ভূমিকা ও ইরানের সমর্থন
তিনি ইমাম খোমেনীর (রহ.) ফিলিস্তিন বিষয়ে ফতোয়া এবং ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েলি দূতাবাস ফিলিস্তিনিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, “ইরান সব সময় মজলুম জাতিগুলোর পাশে ছিল, এবং ফিলিস্তিন, লেবানন, ইয়েমেন ও ইরাকে প্রতিরোধ ফ্রন্টকে শক্তিশালী করেছে।” শেখ আহমদ ইয়াসিন থেকে শহীদ সালেহ পর্যন্ত প্রতিরোধের নেতারা ইরানের ভূমিকা স্বীকার করেছেন।

লেবাননে জনগণের প্রতিরোধের প্রতি সমর্থন
তিনি বলেন, “সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং অন্যান্য কমান্ডারদের শাহাদতের পর লেবাননে লাখো মানুষের জানাজা ছিল প্রতিরোধের প্রতি জনসমর্থনের প্রমাণ।” ফরাসি বার্তা সংস্থার (AFP) তথ্য অনুযায়ী, ১৩ লক্ষের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিল।

লেবানে শিয়া-সুন্নি ঐক্য: নজিরবিহীন
তিনি বলেন, “সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সাংস্কৃতিক প্রচেষ্টার ফলে লেবানে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে নজিরবিহীন সহাবস্থান তৈরি হয়েছে।” সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় সুন্নি জনগণ দক্ষিণের শিয়া উদ্বাস্তুদের জন্য নিজেদের ঘর খুলে দেয়, যা সত্যিকারের ইসলামী ঐক্যের নিদর্শন।

উম্মাহর ঐক্যই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিজয়ের চাবিকাঠি
তিনি বলেন, “ঐক্য ছাড়া বিজয় সম্ভব নয়। ইমাম খোমেনীর (রহ.) ‘ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ’ ঘোষণার মতো পদক্ষেপই আজ ফিলিস্তিন, লেবানন, ইয়েমেন ও ইরানে এর সুফল এনে দিয়েছে।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha