রবিবার ৬ জুলাই ২০২৫ - ১৯:১০
ইরানি জাতি কখনোই আধিপত্যবাদী শক্তির সামনে মাথা নত করবে না

ইরানের জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা হুজ্জাতুল ইসলাম অলী আশুরার রাতে ইমাম খোমেনি (রহ.) হুসাইনিয়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেন, ইমাম হুসাইন (আ.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে অত্যাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ়তা, মর্যাদা ও সত্যের পথে অবিচল থাকা যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানি জাতি কখনোই আধিপত্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম অলী বলেন, “ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শোকানুষ্ঠান কেবল আবেগ নয়, বরং এটি সমাজের আত্মিক উন্নয়ন ও ইসলামী মর্যাদাবোধের ভিত্তি।”

তিনি সূরা আলে ইমরানের শেষ আয়াত পাঠ করে বলেন,“আল্লাহ মুমিনদের কাছে দুটি ধরনের ‘স্থিরতা’ চেয়েছেন—একটি ব্যক্তিগত, আরেকটি সামষ্টিক। ব্যক্তিগত স্থিরতা হচ্ছে পাপ ও প্রলোভনের বিরুদ্ধে নিজেকে দৃঢ় রাখা। আর সামষ্টিক স্থিরতা—এটি উচ্চতর গুণ—যা সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ধর্ম প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত।”

নেতৃত্ব ও সমাজে 'মেহওয়ার' বা কেন্দ্রীয় ভূমিকায় গুরুত্ব
তিনি বলেন, সমাজে নেতৃত্বের গুরুত্ব বোঝাতে নামাজে ইমামতের উদাহরণ যথার্থ। “যদি ইমাম জমা’আত তার স্থানে অবিচল থাকেন, জামাতও টিকে থাকে। আর তিনি সরে গেলে জামাত ভেঙে পড়ে। পরিবারে যেমন বাবা দ্বীনের কেন্দ্র, যদিও মা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; কিন্তু সামগ্রিক দ্বীনদারির দায়িত্ব বাবার কাঁধে।”

তিনি আল্লামা মাজলিসির একটি বাস্তব কাহিনি উল্লেখ করেন, যিনি প্রতি সপ্তাহে অল্প সময় ধরে সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতেন। কিন্তু মূল প্রভাবশালী ছিল তাঁর আমল ও সততা। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, সফল শিক্ষাদানের মূল চাবিকাঠি হলো কর্ম ও চরিত্র।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেতৃত্বের অবিচলতা
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “ইমাম খোমেনির (রহ.) আত্মিক শক্তি ও স্থিরতা না থাকলে, বিপ্লব-পরবর্তী ঝড়ঝাপটার সময় দেশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। বিশেষ করে যুদ্ধের শুরুতে, যখন খোররমশহর দখল হয়ে যায়, তখন ইমামের শান্ত প্রতিক্রিয়া—‘যুদ্ধই তো হচ্ছে’—সবাইকে সাহস দিয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রি, বিচারপতি, সংসদ সদস্য ও সামরিক নেতৃবৃন্দ একযোগে শহীদ হন। কিন্তু তবুও জাতি ভেঙে পড়েনি, কারণ ওয়ালিয়ে ফকিহ ছিলেন জাতির কেন্দ্রীয় সুতোর মতো, যিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন।”

সমকালীন ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে নেতৃত্বের ভূমিকায় বিশ্লেষণ
তিনি ইরানের সাম্প্রতিক প্রতিরোধ ও জেনারেলদের শহীদ হওয়া নিয়ে বলেন, “শহীদ হজ্জ কাসেম সোলায়মানি, শহীদ হাজিজাদে ও অন্যদের হত্যা করে শত্রু ভেবেছিল আমরা বিপর্যস্ত হব। কিন্তু রাহবার কম সময়ের মধ্যেই দক্ষ নেতৃত্ব মনোনয়ন দিয়ে জানিয়ে দেন—ইসরায়েল ভুল করেছে।”

তিনি যোগ করেন, “এই দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই আমাদের প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায় এবং শত্রু অস্ত্রবিরতিতে বাধ্য হয়।”

গত ২০০–৩০০ বছরের তুলনায় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ৪৭ বছরের বিজয়
তিনি বলেন, “যেখানে দুর্বল রাজাদের হাতে একের পর এক অঞ্চল হারিয়ে গিয়েছিল, সেখানে বিগত ৪৭ বছরে এক ইঞ্চি জমিও শত্রু দখল করতে পারেনি। এর পেছনে আছে রাহবারি কাঠামোর স্থিরতা, যার কারণে সমাজে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়নি।”

ইরান: বৈশ্বিক প্রতিরোধ ফ্রন্টের কেন্দ্রবিন্দু
“আজকের ইরান কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, এমনকি ইউরোপ-আমেরিকাতেও প্রতিরোধের প্রতীক। ফ্রান্স, লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে বিক্ষোভ—এটাই প্রমাণ করে ইরানের নেতৃত্বে গঠিত ফ্রন্ট এখন বৈশ্বিক হয়ে উঠেছে। রাহবারের সাম্প্রতিক চিঠিতে পশ্চিমা তরুণদের প্রতি এ বার্তাই উচ্চারিত হয়।”

ইমাম মাহদী (আ.)-এর লক্ষ্য: বৈশ্বিক ন্যায় ও শোষণবিরোধিতা
তিনি বলেন, “কোনো হাদিসে নেই যে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) আসবেন যেন সবাই মুসলমান হয়। বরং তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বজুড়ে অন্যায় ও জুলুম নির্মূল করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আজ ইউরোপ ও আমেরিকার রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে—এটাই সেই ভবিষ্যতের সূচনা।”

ইসরায়েল ও আধিপত্যবাদী শক্তির প্রকৃতি
“ইসরায়েল একা টিকে থাকতে পারে না, এটি একটি বৃহত্তর কুফরি ফ্রন্টের অংশ। কোরআনের ভাষায়, সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু ‘ইহুদি ও মুশরিক’েরা। এদেরই আধিপত্যবাদী চক্র আজকের ‘সিস্টেমেটিক জুলুম’ পরিচালনা করছে।”

তিনি বলেন, “ইসরায়েল শুধু একটি দেশ নয়, এটি পুরো দুনিয়াজুড়ে ইহুদি ও খ্রিস্টান চরমপন্থীদের ফাঁদ। ৭০ মিলিয়ন ইভানজেলিকাল খ্রিস্টানসহ পশ্চিমের অনেক রাজনীতিক নিজেরাই গর্ব করে নিজেদের ‘সায়োনিস্ট’

শেষ কথা: আমরা মাথা মাথা নুয়াবো না
আমরা বিজয়ের জন্য প্রস্তুত, শহীদ হওয়ার জন্যও প্রস্তুত। আমাদের প্রেরণা ইমাম হুসাইন (আ.)—যিনি কারবালার ময়দানে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভগ্নপ্রায় আশ্রয়ে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিলেন। সেই আত্মত্যাগ, সেই নেতৃত্ব আজও আমাদের চালিত করে।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha