আশুরা ও হযরত জয়নাব (সা.আ.)-এর ঐতিহাসিক ভূমিকাকে কেন্দ্র করে হাওজা নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জনাবা কাম্ভারী বলে— হযরত জয়নাব (সা.আ.) ইসলামের ইতিহাসে একজন অনন্যসাধারণ নারী, যিনি ইসলামি আদর্শনারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। কারবালার বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখা এবং তার বার্তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অমূল্য।
তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল আশুরার বার্তাবহন ও সংরক্ষণ। হযরত জয়নাব (সা.আ.) ইয়াজিদের দরবারসহ বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে বক্তব্য রেখে আহলে বাইতের (আ.আ.) উপর ঘটে যাওয়া জুলুম-নির্যাতনের সত্যতা জাতির সামনে তুলে ধরেন। তাঁর এই ভূমিকাই মুসলিম জনমনে জাগরণ সৃষ্টি করে।
জনাবা কাম্ভারী আরও বলেন, কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর সৃষ্ট সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে হযরত জয়নাব (সা.আ.) অসাধারণ ধৈর্য, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের গুণে আহলে বাইতের পরিবারের সদস্যদের সাহস ও সংহতিতে পরিচালিত করেন। এই বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবস্থাপনাই আশুরার মূল বার্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি উল্লেখ করেন, হযরত জয়নাব (সা.আ.)-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল জুলুম ও ফাসাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ। তিনি ইয়াজিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে সত্য উচ্চারণ করেন এবং প্রমাণ করেন যে, আশুরা শুধুমাত্র অতীতের কোনো ঘটনা নয়, বরং তা সব যুগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক।
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, হযরত জয়নাব (সা.আ.)-এর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যকলাপও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আশুরার বার্তা ছড়িয়ে দেন এবং ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষায় সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করেন। তাঁর আদর্শিক অবস্থান আজও মুসলিম নারী সমাজের জন্য পথনির্দেশনা হয়ে আছে।
জনাবা কাম্ভারী শেষাংশে বলেন, হযরত জয়নাব (সা.আ.) কেবল একটি ঐতিহাসিক চরিত্র নন, বরং তিনি এক জীবন্ত প্রতীক—যিনি আশুরাকে একটি বৈশ্বিক ন্যায়সংগ্রামে রূপ দিয়েছেন এবং প্রমাণ করেছেন, নারী নেতৃত্বও ইতিহাস পরিবর্তনের শক্তি রাখে।
হযরত জয়নাব (সা.আ.)-এর জীবন ও অবদান মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর নেতৃত্ব, সাহস ও প্রজ্ঞা আজও ইতিহাসের পাতায় প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের অম্লান দৃষ্টান্ত হয়ে চিরস্থায়ী হয়ে আছে।
আপনার কমেন্ট