রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫ - ০৮:১১
নম্রতা, কর্মচাঞ্চল্য ও আত্মত্যাগ — আয়াতুল্লাহ হুজ্জতির চিরস্মরণীয় উত্তরাধিকার

করজ ইসলামী আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষিকা ও গবেষক দেলারা নঈমতি প্রয়াত আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ বাকের হুজ্জাতির জীবন ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বলেন, "তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের বিনয়ী ও দূরদর্শী শিক্ষক। যেসব শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনি সম্ভাবনা ও মেধা লক্ষ করতেন, তাদের উন্নয়নে তিনি বিশেষ মনোযোগ ও সহানুভূতি দেখাতেন।"

হাওজা নিউজ এজেন্সি: ডক্টরেট সম্পন্ন করার পর হুজ্জাতির সরাসরি পরামর্শেই নঈমতি করজ ইসলামী আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানে তিনি থিওলজি বিভাগের পরিচালনা ও সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কুরআন ও হাদীস গবেষণা কার্যক্রমে আয়াতুল্লাহ হুজ্জাতির ঘনিষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন।

দুই পর্যায়ে সরাসরি শিক্ষালাভ

নঈমতি জানান, তিনি ১৯৯৫ সালে তেহরানের ত্যারবিয়াতে মোদাররেস বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এবং ১৯৯৯–২০০৩ পর্যন্ত ডক্টরেট পর্যায়ে আয়াতুল্লাহ হুজ্জাতির ছাত্রী ছিলেন।
“তিনি শুধু শিক্ষক ছিলেন না, ছিলেন অভিভাবকের মতো। তিনি আমাদের শিক্ষা ও মানসিক অগ্রগতির দিকেও সমান গুরুত্ব দিতেন,” বলেন নঈমতি।

সততা ও বিনয়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

নঈমতির ভাষায়, “তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখতেন। তবে কোনো বিষয়ে অজ্ঞতা থাকলে অকপটে স্বীকার করতেন, যা একজন বড় মনের ও আত্মবিশ্বাসী পণ্ডিতেরই গুণ। অনেক শিক্ষক হয়তো এমন স্বীকারোক্তিতে সংকোচবোধ করতেন, কিন্তু হুজ্জাতি তা করতেন পরম আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে।”

কুরআন ও হাদীস শাস্ত্রে অগ্রণী ভূমিকা

যদিও বয়সে প্রবীণ ছিলেন, হুজ্জাতি সব সময় সক্রিয় ও কর্মচঞ্চল ছিলেন। তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং কুরআন বিষয়ক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরিষদ ও গবেষণা প্রকল্পে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘কুরআন ও হাদীস’ শাস্ত্রের প্রবর্তক হিসেবে এই ক্ষেত্রে মৌলিক অবদান রাখেন।

দর্শন থেকে কুরআনের পথে—এক আত্মত্যাগী সিদ্ধান্ত

যদিও আয়াতুল্লাহ হুজ্জাতি দর্শনশাস্ত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তিনি কুরআন গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সে পথে নিজেকে নিবেদিত করেন।
নঈমতি বলেন, “একজন মানুষ যখন আধ্যাত্মিক পরিপক্বতায় পৌঁছান, তখন তিনি নিজস্ব স্বার্থের বাইরে বৃহত্তর সমাজের কল্যাণে ভাবতে শুরু করেন। হুজ্জাতি ছিলেন তেমনই একজন আত্মনিবেদিত জ্ঞানসাধক।”

প্রয়োজন থেকেই সৃষ্টি ‘তারীখে কুরআন’

হুজ্জাতির অন্যতম উল্লেখযোগ্য রচনা ‘তারীখে কুরআন’ (কুরআনের ইতিহাস)। এ বইটি তিনি স্বল্প সময়ের মধ্যে লেখেন, কারণ তিনি এই বিষয়ে গবেষণার ঘাটতি অনুভব করেছিলেন।
নঈমতি বলেন, “তিনি এক গ্রীষ্মে বইটি লিখে শেষ করেন, যদিও পরে বলেছিলেন, এটি আরও পরিমার্জনার প্রয়োজন ছিল। দুঃখজনকভাবে, তিনি তা আর সম্পন্ন করতে পারেননি।”

আয়াতুল্লাহ হুজ্জাতি ছিলেন বিদ্বান, বিনয়ী, দূরদর্শী ও সমাজকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ এক শিক্ষক। তাঁর পাণ্ডিত্য, চরিত্র এবং অবদান প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আলোকিত করে যাবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha