শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫ - ১৫:০০
ইরান ও আইএইএ-র মধ্যে নতুন সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র উপ-মহাপরিচালক শিগগিরই ইরান সফর করবেন। সফরকালে দুই পক্ষের মধ্যে একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাকাই বলেন, ইরান ও যৌথ সমন্বিত কার্যপরিকল্পনা (JCPOA)-র ইউরোপীয় তিন পক্ষের মধ্যে শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকটি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানের পরমাণু ইস্যুতে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান পর্যালোচনা করে সংশোধন করতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো অতীতের অগঠনমূলক ভূমিকা থেকে সরে এসে নতুন করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করবে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের প্রতি নীরবতা—তাদেরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনভঙ্গ ও আগ্রাসনের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাকাই জানান, ইরান ইতিমধ্যে এসব অনুচিত অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং আসন্ন বৈঠকে এই বিষয়ে ইউরোপীয় পক্ষগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানানো হবে ও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া সক্রিয় করার হুমকি প্রসঙ্গে বাঘাঈ বলেন, “নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও ইরানের পরমাণু ইস্যুকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডায় রাখার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।" তিনি বলেন, JCPOA বিষয়ক নিজেদের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করায় ইউরোপীয় তিন দেশের এই প্রক্রিয়া প্রয়োগের কোনো বৈধতা নেই।

তিনি যোগ করেন: “এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মাধ্যমে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় সংঘটিত হামলাকে সমর্থন দিয়ে শুধু আন্তর্জাতিক আইন নয়, বরং জাতিসংঘের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব এবং JCPOA-এর মূলকেও লঙ্ঘন করেছে। ফলে, তারা এখন আর চুক্তিভিত্তিক কোনো প্রক্রিয়া প্রয়োগ বা প্রস্তাব করার মতো বৈধতা রাখে না।”

বাকাই বলেন, “২০১৫ সালে JCPOA ও ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের অধীনে বাতিল হওয়া নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের কোনো আইনগত, নৈতিক কিংবা যৌক্তিক ভিত্তি নেই। ইরান এখনও চুক্তির সদস্য, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে প্রত্যাহার করার এক বছর পর যেসব প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পূর্ণরূপে JCPOA-এর কাঠামোর মধ্যেই রয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে বরং ইরানকে মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করছে, যা নীতিগত ও আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

ইসরায়েলি প্রভাব প্রসঙ্গে বাকাই বলেন, “ইসরায়েল, যেটি এই অঞ্চলের একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র এবং JCPOA-র প্রধান বিরোধী, ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে তাদের অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই দেশগুলো কি ইসরায়েলের অশুভ রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বিসর্জন দিতে চায়?”

২২৩১ নম্বর প্রস্তাবের মেয়াদ বাড়ানোর প্রসঙ্গে বাকাই বলেন, “যখন নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো বৈধতা নেই, তখন এই প্রস্তাবের মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন, এবং ইরান তা ঘোরতরভাবে প্রত্যাখ্যান করে।”

IAEA-এর সঙ্গে সহযোগিতার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বাকাই বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবৈধ ও আগ্রাসনমূলক কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ইরান তার সহযোগিতা সীমিত করেছে। এসব হামলা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এসব হামলার তীব্র নিন্দা জানানো এবং দোষীদের আন্তর্জাতিক জবাবদিহির আওতায় আনা।”

বাকাই জোর দিয়ে বলেন, ইরান এখনো পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) এবং বিস্তৃত নিরাপত্তা চুক্তি (Comprehensive Safeguards Agreement)-এর সদস্য। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে IAEA-এর সঙ্গে যেকোনো সহযোগিতা ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে, যা দেশের সংসদীয় আইন অনুযায়ী নির্ধারিত।

শেষে তিনি জানান, IAEA-এর উপ-মহাপরিচালক আসন্ন কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তেহরান সফর করবেন। সফরের উদ্দেশ্য হবে IAEA ও ইরানের মধ্যে একটি নতুন সহযোগিতা কাঠামো নিয়ে আলোচনা। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরমাণু স্থাপনাগুলোর পরিদর্শনের কোনো পরিকল্পনা নেই।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha