হাওজা নিউজ এজেন্সি: সংস্থাটির তথ্যানুসারে, উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উপগ্রহটি নির্ধারিত কক্ষপথে সঠিকভাবে স্থাপন হয়েছে।
এই টেলিযোগাযোগ উপগ্রহটি ইরানি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে, দেশীয় বিভিন্ন জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় নির্মিত হয়েছে। এটি প্রায় ১১০ কিলোগ্রাম ওজনের এবং উৎক্ষেপণ ও কার্যক্রম পরিচালনার দিক থেকে ইরানের মহাকাশ প্রযুক্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নাহিদ-২ উপগ্রহের মাধ্যমে কু-ব্যান্ড (Ku-band) টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি প্রথমবারের মতো মহাকাশে ব্যবহারিক পরীক্ষার আওতায় আসছে। একই সঙ্গে এতে সংযুক্ত রয়েছে আরও কিছু অত্যাধুনিক মহাকাশ প্রযুক্তি, যার মধ্যে রয়েছে:
তিন অক্ষবিশিষ্ট মনোভাব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Three-axis attitude control system), বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে দ্বিমুখী যোগাযোগ, ডেটা ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যুৎ বিতরণ প্রযুক্তি।
উপগ্রহটি ২৫ জুলাই শুক্রবার একটি রাশিয়ান ‘সোয়ুজ’ রকেটের মাধ্যমে রাশিয়ার ভোস্তোচনি কসমোড্রোম থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণযানে ইরানি মহাকাশ সংস্থার লোগো ব্যবহৃত হওয়া এই মিশনে ইরানের আন্তর্জাতিক মহাকাশ অভিযানে সরাসরি অংশগ্রহণকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে একই ধরণের সোয়ুজ রকেটের মাধ্যমে ইরানের ‘খৈয়াম’, ‘পার্স-১’ ও ‘হুদহুদ’ নামক উপগ্রহগুলোও মহাকাশে পাঠানো হয়েছে।
নাহিদ-২ উপগ্রহটিকে কক্ষপথে পাঁচ বছর পর্যন্ত সক্রিয় থাকার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কক্ষপথে অবস্থানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো—পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ধীরে ধীরে কক্ষপথ বিচ্যুতি। এই সমস্যার সমাধানে উপগ্রহটিতে রয়েছে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত একাধিক ‘হট গ্যাস থ্রাস্টার’ সম্বলিত চালন (propulsion) ব্যবস্থা, যা প্রয়োজনে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
এই প্রপালশন সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত উপাদানগুলো যেমন—কম্পোজিট ফুয়েল ট্যাংক, উচ্চচাপ ভালভ এবং সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ থ্রাস্টার—সবই ইরানে অভ্যন্তরীণভাবে ডিজাইন ও নির্মিত হয়েছে। এইসব প্রযুক্তিপণ্য সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত সীমিতভাবে পাওয়া যায়, যা ইরানের স্বনির্ভরতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
উপগ্রহে আরও যুক্ত রয়েছে: পলিমার-ভিত্তিক আবরণ ও মহাকাশ-মানের আঠালো উপাদান, যা তাপ নিরোধক ও পরিবাহী ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়
ইরানে নির্মিত লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, যা দশ হাজারেরও বেশি চার্জ ও ডিসচার্জ চক্র সহ্য করতে সক্ষম
এইসব উপাদান ও প্রযুক্তি সম্পূর্ণরূপে ইরানি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন ও উৎপাদন করা হয়েছে, যা দেশের মহাকাশ সক্ষমতায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আপনার কমেন্ট