শুক্রবার ১ আগস্ট ২০২৫ - ১০:১০
কোরআন ছিল আমার বাবার প্রধান উপদেষ্টা: শহীদ কমান্ডার সালামির কন্যা

সদ্য শহীদ ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামির কন্যা বলেছেন, পিতা তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআনকে সঙ্গী, প্রধান উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা হিসেবে গ্রহণ করতেন এবং তাঁর কাজকর্মে কোরআন ছিল পথপ্রদর্শক।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: জেনারেল সালামির কন্যা কাউসার সালামি এক কোরআনী সমাজের সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, আমার পিতা কোরআনের তেলাওয়াতকে অনেক গুরুত্ব দিতেন এবং বলতেন, যে বাড়িতে কোরআন তেলাওয়াত হয়, সেটি রাতের আকাশে এক দীপ্তিমান তারা হয়ে ওঠে, যা আকাশকে আলোকিত করে।

তিনি আরও বলেন, পিতা রাতে কোরআনের আয়াত শুনে ঘুমাতেন এবং গাড়িতে কোথাও যাওয়ার সময় গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত সুরা ফাতিহা পাঠ করতেন। তাঁর প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন কোরআন; তিনি প্রায়শই কাজের সিদ্ধান্ত নিতে কোরআন থেকে পরামর্শ নিতেন, কারণ তিনি কোরআন খুলে আয়াতগুলো গভীরভাবে ভাবতেন এবং কোরআন সর্বদা তাঁর পথপ্রদর্শক ছিল।

শহীদ সালামির কন্যা আরও জানান, যখন আমি ছোট ছিলাম এবং কোরআন হিফজ শুরু করেছিলাম, পিতা খুব খুশি হত এবং প্রতিটি আয়াত হিফজ করার জন্য আমাকে পুরস্কৃত করতেন।

তিনি আরও বলেন, শহীদ সালামি প্রতিদিন রাতে এবং ভোরে নামাজের পরে এক পারা কোরআন পাঠ করতেন এবং কাজের জন্য যাওয়ার আগে বা পোশাক পরার সময় জিয়ারত আশুরাও পড়তেন। তাঁর একটি বিশেষ অভ্যাস ছিল মুখে নিচু স্বরে (হাফসে) যিকর ও আয়াত পাঠ করা।

শহীদ সালামি কোরআনের হাফেজ ছিলেন, তবে তিনি তেলাওয়াতের সময় আয়াতের দিকে তাকিয়ে পড়ার ব্যাপারে কঠোর ছিলেন, তাই সবসময় তাঁর কাছে কোরআন থাকত।

কোরআনী সংস্কৃতির উন্নতি ছিল শহীদ সালামির প্রধান লক্ষ্য
আইআরজিসির সংস্কৃতি ও প্রচার উপদেষ্টা কমান্ডার হোসেন মুহিব্বী বলেন, যেখানে কোরআনের প্রচার ও উন্নতির কথা উঠত, শহীদ সালামি সর্বদা তা উৎসর্গ করতেন কারণ কোরআনী সংস্কৃতির উন্নতি তাঁর অন্যতম প্রধান উদ্বেগ ছিল। তিনি ‘قرارگاه قرآنی نور’ নামক একটি কোরআনী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তার সভাপতিত্ব করতেন।

তিনি বলেন, শহীদ সালামির কাছে কোরআনের প্রচার ছিল অগ্রাধিকার; একবার সামরিক বাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক কোরআনী প্রদর্শনীতে বাহিনীর কোরআন প্রতিযোগিতায় অর্জিত অগ্রগতির রিপোর্ট পেয়ে তিনি প্রশংসা করলেও সতর্ক করে বলেছিলেন, প্রতিযোগিতা আমাদের প্রধান লক্ষ্য নয়।

মুহিব্বী আরও জানান, শহীদ সালামির বক্তৃতাগুলোতে কোরআনের আয়াত এক বিশেষ শোভা ছিল; একজন সহকর্মী তাঁর ২০০টিরও বেশি বক্তৃতার শিরোনাম সংগ্রহ করেছেন যা আলাদা আলাদা বই হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে।

শহীদ সালামির নামে কোরআনী প্রকল্প 
কোরআন ও ইতরাত সংস্থার প্রধান রহিম কোরবানি বলেন, শহীদ হোসেন সালামির একটি অজানা দিক ছিল তাঁর কোরআনী জীবন, যা দেশ-বিদেশের কোরআনী সমাজের কাছে সঠিকভাবে পরিচিত হওয়া উচিত। তিনি কোরআন হিফজের এক অনুকরণীয় আদর্শ ছিলেন এবং বিভিন্ন হিফজ প্রকল্প শহীদ সালামির নামে চালু করা যেতে পারে।

শহীদ সালামি ছিলেন কোরআনের বাস্তব অনুবাদক
হুজ্জাতুল ইসলাম আব্দুল্লাহ হাজি সাদিকি বলেন, শহীদ সালামি সবসময় হঠাৎ করেই কোরআন খুলে নিতেন এবং আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন আয়াত সামনে থাকত যা আলোচনার প্রাসঙ্গিক উত্তর ছিল। তিনি কোরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যাদাতা ছিলেন, যা প্রচলিত অনেক তাফসীরের থেকেও আলাদা।

তিনি শহীদ সালামিকে ‘জিহাদে তাবিয়িন’ (সত্য প্রকাশের প্রচেষ্টায়) কোরআনকে কেন্দ্র করে এক নেতা হিসেবে বর্ণনা করেন এবং জানান যে তিনি ১২,৫০০-এর বেশি কোরআনী বাণী লেখা ফ্রেম সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করেছিলেন, যা সৈন্যদের চোখের সামনে কোরআনের আয়াত নিয়মিত উপস্থিত রাখে। তিনি আশাবাদী এই সংখ্যা ৩০,০০০-এ উন্নীত হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha